insta logo
Loading ...
×

এবার দুয়ারে হাসপাতাল, পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে মোবাইল স্বাস্থ্যকেন্দ্র

এবার দুয়ারে হাসপাতাল, পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে মোবাইল স্বাস্থ্যকেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিনিধি , পুরুলিয়া:

রাজ্যে পরিবর্তন জমানায় জঙ্গলমহলে ভ্রাম্যমান চিকিৎসাকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছনোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা মাঝপথেই মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়েছিল। কোথাও অব্যবস্থা, কোথাও সমন্বয়ের অভাব—ফলে প্রকল্পের সাফল্য অধরাই থেকে যায়। এবার আরও আধুনিক রূপে সেই উদ্যোগই ফের শুরু করল রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর। তবে আগের মতো কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নয়—সম্পূর্ণ পরিকল্পনা, পরিচালনা ও পরিষেবা দেবেন সরকার-নিযুক্ত চিকিৎসক, সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মীরা।

পুরুলিয়ায় প্রথম দফায় ছ’টি বিধানসভা—বান্দোয়ান, বাঘমুন্ডি, বলরামপুর, জয়পুর, কাশিপুর ও পাড়া—এই মোবাইল মেডিকেল ইউনিটের সুফল পেতে চলেছে।

বৃহস্পতিবার হুড়ার বিশপুরিয়া থেকে প্রকল্পের সূচনা করেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলাশাসক কোন্থাম সুধীর ও জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশোক বিশ্বাস। একই দিনে বান্দোয়ানের গুরুড়, বাঘমুন্ডির বীরগ্রাম ও পাড়ার নডিহায়ও উদ্বোধন হয় এই পরিষেবার।

জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ অশোক বিশ্বাস বলেন, “কোন এলাকায় ক্যাম্প হবে, এক মাস আগেই জানিয়ে দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র না-থাকা এলাকা বা ডাক্তার শূন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র—সেখানেই প্রধানত পৌঁছবে ইউনিট।”

আধুনিক যন্ত্রপাতি, ছোট ল্যাবেরটারি —সবই থাকবে এই বিশেষ সজ্জিত মেডিকেল ভ্যানে। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য-পরীক্ষা থেকে শুরু করে সাধারণ রোগচিকিৎসা—এক ছাদের নীচে মিলবে পরিষেবা। সোম থেকে শনিবার, সকাল সাড়ে ন’টা থেকেই শুরু হবে শিবির।

পঞ্চায়েত করবে শিবিরের যাবতীয় ব্যবস্থা। প্রকল্পের নোডাল অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ওষুধপত্র সরবরাহ করবেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। নজরদারির দায়িত্বে থাকবেন বিডিও থেকে জেলা পরিষদের কর্তা—স্বাস্থ্যকর্তারা তো রয়েছেনই। ভ্যানে জিপিএস ব্যবস্থা থাকায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত—সবটাই থাকবে প্রশাসনের নজরে।

তবে একটি শর্ত, বিদ্যুতের নাগাল যেখানে, সেখানেই পৌঁছবে ভ্যান। অর্থাৎ অন্তত সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র পর্যন্ত যাতায়াত নিশ্চিত।

তবে প্রশ্ন এখানেও। প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন যুব তৃণমূল কর্মী অভয় মাহাতো। তাঁর বক্তব্য, “তিনটি উপজাতি অধ্যুষিত ব্লকের জন্য আলাদা অ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও, ১৭টি ব্লকের জন্য মাত্র ৮টি গাড়ির বন্দোবস্ত যথেষ্ট নয়। ছয়টি বিধানসভার জন্য ৬টি মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট থাকলেও রঘুনাথপুর মহকুমা পুরোপুরি বাদ পড়েছে। কোভিড অতিমারি কালে ১০২ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবায় যারা কাজ করেছিলেন, সেই অভিজ্ঞ ড্রাইভারদের পুনর্নিয়োগের দাবিও এখনো মানা হয়নি।
ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ল্যাব টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য কর্মীসংক্রান্ত ঘাটতি এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
মোবাইল ইউনিটে পরিষেবা দেওয়ার জন্য গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে কর্মী তুলে নেওয়া হলে সেদিন হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হবে। “

তাঁর দাবি, “একটি গ্রামীণ হাসপাতালে দিনে দেড়শো থেকে দু’শো মানুষ পরিষেবা নিতে আসেন। সেখানে কর্মী কমিয়ে বাইরে ক্যাম্প করলে হাসপাতালে নিয়মিত পরিষেবা বাধাপ্রাপ্ত হবে। অথচ ক্যাম্পে উপস্থিতি অনেক ক্ষেত্রেই ২৫–৫০ জনের বেশি হয় না। সময়মতো পরিকাঠামো না থাকলে এই পরিষেবা কার্যকর হওয়া কঠিন।”

তিনি আরও বলেন, “অসংখ্য কনট্রাকচুয়াল পদের শূন্যতা দ্রুত পূরণ হলে মোবাইল ইউনিট পরিষেবা নিখুঁতভাবে চালানো সম্ভব হবে এবং গ্রামীণ হাসপাতালের কাজে বিঘ্নও ঘটবে না।”

অসংখ্য প্রশ্ন নিয়ে শুরু হল পুরুলিয়া জেলার এই দুয়ারে স্বাস্থ্য পরিষেবা মোবাইল ইউনিট। ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদার ‘ হয়ে থাকবে না তো এই প্রকল্প? উঠছে প্রশ্ন।

Post Comment