insta logo
Loading ...
×

গজ শস্ত্রে বাঘিনীর মোকাবিলা

গজ শস্ত্রে বাঘিনীর মোকাবিলা

সুজয় দত্ত ও বিশ্বজিৎ সিং সর্দার :

ঘুম পাড়ানি মাসিপিসিরা নয়, ওড়িশার ঘরছাড়া বাঘিনীকে ঘুম পাড়াতে আরও এলো চারটি ট্রাংকুলাইজার দল।

মোতায়েন করা হলো হুলা পার্টি। জিনাত আগমনের পঞ্চম দিনে সম্পূর্ণ নতুন পদক্ষেপ তাকে কাবু করতে। নিয়ে আসা হয়েছে গজ শস্ত্র। হাতি তাড়ানোর জন্য এর উদ্ভাবন বলে নাম গজ শস্ত্র। একেবারে স্বল্প খরচে তৈরি পরিবেশবান্ধব আগ্নেয়াস্ত্র। প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তৈরি এই কৃত্রিম বন্দুকে কার্বাইড ও জলের সংমিশ্রণে উৎপাদিত গ্যাস ট্রিগারের সাহায্যে চাপ দিয়ে বের করা হয়। আর তার মুখ দিয়ে বার হয় তীব্র আওয়াজ ও আগুনের ঝলকানি। সেই শব্দ ও আলো হাতির দলকে ভয় পাইয়ে পিছু হঠতে বাধ্য করে। কিন্তু হাতির ক্ষেত্রে যা কার্যকর বাঘিনীর ক্ষেত্রে কতটা কাজে আসবে? বন দফতরের পরিকল্পনা গজ শস্ত্রের আওয়াজে জিনাতকে চমকে দেওয়া। ভয় পেয়ে ছোটাছুটি করলে তার মোকাবিলা সহজ হতে পারে। কারণ আজ পঞ্চম দিনেও রয়্যাল বেঙ্গল বাঘিনীর হদিশ পেতে নাকাম বন দফতরের বিশেষ টিম। সারা রাত ধরে খাঁচাবন্দি দশাসই ছাগলগুলো ডেকেই চলেছে। কিন্তু তাতেও সাড়া দেয়নি জিনাত। সে কি বুঝতে পেরেছে এ তাকে ধরার ফাঁদ?
ফলে বান্দোয়ানের ভাঁড়ারি পাহাড় জুড়ে থাকা পাঁচটি খাঁচার একটিতেও বন্দি হলো না বাঘিনী। বৃহস্পতিবার সকালে অতিরিক্ত চারটি ট্রাংকুলাইজার দল বান্দোয়ানে পৌঁছায়। দলগুলোর মধ্যে দুটি এসেছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে,একটি বাঁকুড়া এবং আরেকটি মেদিনীপুরের। এর আগে শুধু ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের দুটি ট্রাংকুলাইজার দল ছিল। বর্তমানে সবে মিলিয়ে এই দলের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬। ৬ টি ঘুমপাড়ানি দল চষে বেড়াবে পাহাড়।





বৃহস্পতিবার সকালেই ওই পাহাড়ের চারটি ট্রেকিং রুট চিহ্নিত করে চারটি ট্রাংকুলাইজার দল পায়ে হেঁটে পাহাড় চূড়া পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল।
দলগুলো আকারে ছোটো ছোটো। প্রতিটি দলে একজন করে শ্যুটার আছেন। আছেন একজন রেডিও কলার ট্র‍্যাকার। আর আছেন হুলা পার্টির সদস্য এবং বন দপ্তরের কর্মীরা।

পরিকল্পনা রয়েছে হুলা পার্টির মাধ্যমে জিনাতকে তাড়িয়ে জালবন্দি করা৷ বলছেন হুলা পার্টির সদস্য নয়ন মান্ডি।

কিন্তু সারা দিন পাহাড় চষে বেড়ালেও জিনাতের দর্শন মেলেনি। একটি দল আংশিক সময়ের জন্য ট্র‍্যাক করতে পেরেছিল লোকেশন। ব্যস!

একটি দল পাহাড়ের চূড়ায় দুটি খোবলানো ছাগলের দেহ উদ্ধার করে। তাদের শিকার করেছে জিনাত, তেমনটাই সন্দেহ করা হচ্ছে৷ বুধবার রাত থেকে জিনাতের সেরকম কোনো মুভমেন্টের তথ্য পায়নি বন দফতরের ট্র‍্যাকার৷ সম্ভবত পেট ভর্তি ছাগল খেয়ে জিনাত গুহার ভেতরে বিশ্রাম করছে।
কারণ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাঘিনীর গলায় থাকা রেডিও কলারের যে তথ্য মিলেছে সেই তথ্য অনুযায়ী বাঘিনী পূর্বের স্থানেই আশ্রয় নিয়ে আছে।

তবে বৃহস্পতিবার রাতেও চেষ্টা চালাবে ব্যাঘ্র প্রকল্প ও বন দফতরের কর্মীরা। হাতে গজ শস্ত্রের নতুন আয়ূধ। আলোর ঝলকানি আর শব্দের জোরে ভয় পেয়ে জিনাত যদি লোকালয়ের দিকে চলে আসে?
পাহাড়তলিতে তিন কিমি এলাকা জুড়ে সুন্দরবনের জাল ঘেরা হয়েছে।

বন দফতরের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ – পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকার বলেন,” সব রকম ভাবেই আমাদের চেষ্টা চলছে। জিনাত তার পূর্বের স্থানেই রয়েছে।”

কিন্তু গ্রামবাসীদের ভয় অন্য জায়গায়। জঙ্গলে খাবার অভাব হলে লোকালয়ে নেমে আসবে না তো জিনাত? কেন্দাপাড়ার বাসিন্দা মোহন সিং বলছেন, অতি সত্বর বাঘিনীকে নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক৷

Post Comment