নিজস্ব প্রতিনিধি, মানবাজার:
ছোটনাগপুর মালভূমির পাদদেশে অবস্থিত পুরুলিয়া জেলা, যেখানে প্রায় ১৮.৪৫ শতাংশ মানুষ তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও এখানকার আদিবাসী নারীরা এখনও দারিদ্র্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অভাব, অল্পবয়সে বিবাহ এবং লিঙ্গ বৈষম্যের মতো নানা সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই বাস্তবতাকে পাল্টাতে নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে আইসিএআর–সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিফরি), ব্যারাকপুর।
‘স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ — নারী ও কন্যাদের ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠা—এর বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সিফরি তপশিলি উপজাতি প্রকল্প -এর অধীনে পুরুলিয়ার পুঞ্চা, মানবাজার ও পার্শ্ববর্তী ব্লকগুলিতে আদিবাসী নারীদের নিয়ে মৎস্যচাষভিত্তিক জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
এই প্রকল্পে মোট ১৬টি বাঁধে প্রায় ৪০ একর জলাশয়ে মাছ চাষ শুরু হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করেছে ৪৮টি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী । সিফরির পক্ষ থেকে উপকারভোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ১,৯৫০ কেজি মানসম্পন্ন মাছের পোনা, প্রায় ১৬ টন মাছের খাবার, নৌকা, জাল, নেটসহ মাছ চাষের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ। পাশাপাশি, দুই সেট পেন কালচার পদ্ধতিতে মাছ চাষের সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে।
নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আয়োজিত প্রশিক্ষণ শিবিরে হাতে–কলমে শেখানো হয় মাছ চাষের বৈজ্ঞানিক কৌশল, মাছকে সঠিকভাবে খাবার দেওয়ার পদ্ধতি, এবং জলমান রক্ষণাবেক্ষণের উপায়।
পুঞ্চা ও গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন
রাজ্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের স্বতন্ত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু,
সিফরির অধিকর্তা ড. বসন্ত কুমার দাস,
মৎস্য বিজ্ঞানী ড. অমিত আর্চনকান্তি দাস, ড. অপর্ণা রায় ও ড. দিবাকর ভক্ত,
জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি সুজয় ব্যানার্জী, পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনিল বরণ সহিস সহ অন্যান্য বিশিষ্টজন।
জাতীয় শিক্ষক অমিতাভ মিশ্র জানান, এই প্রকল্পে উৎপাদিত মাছ স্থানীয় বিদ্যালয়গুলির মিড-ডে মিল -এর জন্য ব্যবহৃত হবে, যা শিশুদের পুষ্টি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু সিফরির এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “এমন প্রকল্প রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে আগামী দিনে আরও বিস্তৃত হওয়া উচিত।”
প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য হলো—এসএইচজি দ্বারা উৎপাদিত মাছের ৫০ শতাংশ স্থানীয় বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিল প্রকল্পে সরবরাহ করা, যাতে শিশুদের পুষ্টি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, গোবিন্দপুরে আদিবাসী নারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে এফআরপি ট্যাঙ্ক, অ্যারেটর, ফিড ও দেশীয় রঙিন মাছ চাষের উপকরণ, যা ঘরোয়া আয়ের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
অনুষ্ঠানে ড. বি. কে. দাস বলেন, “নারীদের মৎস্যচাষে যুক্ত করা শুধু আয়বৃদ্ধির উপায় নয়, এটি সামাজিক পরিবর্তনেরও হাতিয়ার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৫৩১টি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল আদিবাসী পরিবার সরাসরি উপকৃত হবে। এটি পুরুলিয়ায় টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রামীণ উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”










Post Comment