নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া:
সোমবার পুরুলিয়া শহর যেন লাল স্রোতে ভেসে গেল। সমস্ত মানুষের কাজ ও ন্যায্য মজুরি, খাদ্য ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা, আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ, স্কুলে তপশিলি জাতি, উপজাতি ছাত্রাবাস দ্রুত খোলার দাবি, সদর হাসপাতাল স্থানান্তর বন্ধ-সহ কুড়ি দফা দাবিতে জেলা শাসকের দপ্তর অভিযান করল সিপিআই(এম)।
জুবিলি ময়দান থেকে বিশাল মিছিল শুরু হয়ে শহর পরিক্রমা করে পৌঁছয় জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে। জেলাশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা শাসক (সাধারণ)-এর হাতে স্মারকলিপি জমা দেন হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, মহম্মদ ইব্রাহিম, কৃষ্ণপদ বিশ্বাস, কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিলাসী বালা সহিস ও ত্রিদিব চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আভাস রায়চৌধুরী ও রাজ্য কমিটির সদস্য সুদীপ সেনগুপ্ত। সভাপতিত্ব করেন জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়।
সভা থেকে রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই সরকারকেই তুলোধোনা করেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, “খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা নিয়ে কোনও চিন্তা নেই দুই সরকারেরই। বিজেপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মন্দিরের রাজনীতি করছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীকে আমি বলব অসংবেদনশীল মুখ্যমন্ত্রী।”
তিনি আরও বলেন, “চার বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। হাইকোর্টের নির্দেশের পরও কাজ শুরু হয়নি। রাজ্যের শাসকদল থেকে বিরোধী, কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। সবাই ব্যস্ত গরু, কয়লা, চাকরি, আবাস যোজনার টাকা চুরি নিয়ে।”
বাম নেতা মনে করান, “১০০ দিনের কাজ প্রথম ইউপিএ-১ সরকারের সময় বামপন্থীদের চাপে আইনে রূপ পেয়েছিল। কিন্তু মোদী সরকারের কাছে এই প্রকল্পে আম্বানি-আদানিদের লাভ নেই বলেই তারা এর বিরোধী।” তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ ও বকেয়া না মেটালে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।”
মহম্মদ সেলিমের দাবি, “গরিব মানুষের অধিকার রক্ষায় লাল ঝান্ডাকে মজবুত করতে হবে। কৃষক, শ্রমিক, বেকার, শিক্ষার অধিকার কেবল বামপন্থার লড়াই দিয়েই সুরক্ষিত হতে পারে। রাজ্যে চলছে সিন্ডিকেট রাজ। নীল-সাদা বিল্ডিং উঠছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। সরকার হাসপাতাল তৈরি না করে তুলে দিতে চাইছে—যা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।”
‘এসআইআর’ ইস্যু নিয়েও রাজ্য সম্পাদক বলেন, “আগেও ভোটার তালিকা সংশোধন হয়েছে। ২০০২ সালের তালিকা বাম আমলেই তৈরি হয়েছিল, তাই ওরা জানে সেটিতে কোনও ভেজাল ছিল না।”
সভায় আভাস রায়চৌধুরী বলেন, “এখন অবস্থা ‘রাজা, তোর কাপড় কোথায়’-র মতো! বিজেপি আর তৃণমূল চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। বাইরে ঝগড়া, ভিতরে সেটিং। কৃষক-খেতমজুরের স্বপ্ন এদের শাসনে ভেঙে চুরমার।”
সিপিআই(এম)-এর রাজ্য কমিটির সদস্য সুদীপ সেনগুপ্ত বলেন, “দেশে নব্য ফ্যাসিবাদের আগমন ঘটেছে। কৃষক-শ্রমিকের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে কেন্দ্র। পরিযায়ী শ্রমিকরা নিখোঁজ, অথচ সরকার ব্যস্ত বিভাজনের রাজনীতিতে।”
সভা থেকে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে জেলা নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ নেতা মনীন্দ্র গোপ, নিখিল মুখার্জি-সহ অনেকে।











Post Comment