বিকাশ মাহাত
শিক্ষক, চেক্যা হাইস্কুল,
ফোন:- ৯৭৩৫১২৪২৭৪
ই-মেইল :- b.k.mahatoprl@gmail.com
শারদীয়ার ৪ দিন পরেই ঘরে ঘরে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। গৃহস্থ বাঙালিরা যদিও বা প্রতি বৃহস্পতিবারই লক্ষ্মী পুজো করেন। তবে কোজাগরী তিথির এই লক্ষ্মী পুজো বাংলা
তথা বাঙালির জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
লক্ষ্মী হলেন ধন ও সম্পত্তির দেবী। দুর্গাপূজা শেষের চতুর্থ দিনে তথা আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে
লক্ষ্মী দেবীর পূজো করা হয়।
ধন ও সম্পত্তির দেবী বলে পূজিতা হওয়া এই লক্ষ্মীকে কোজাগরী লক্ষ্মীও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু কেন বলা হয়?
কোজাগরী লক্ষ্মী কেন বলা হয় :-
‘কোজাগরী’ শব্দের অর্থ হচ্ছে কে জাগতী? মানে কে জেগে আছে? ধন ও সম্পত্তির দেবী লক্ষ্মী স্বয়ং মর্ত্যে এসে গৃহস্থের বাড়িতে ঢুঁ মেরে দেখে যান কোন কোন বাড়িতে গৃহস্থরা জেগে আছেন এবং তার পুজো করছেন। কোজাগরীর আশায় বলা চলে লক্ষ্মী লাভের আশায় রাত জেগে পুজো হয় বাড়ি বাড়ি। কোজাগরী লক্ষ্মীর জন্য একদিকে যেমন ধনবান ও সম্পত্তিশালীরা রাত জাগেন, তেমনি অন্যদিকে সম্পত্তিহীন নি:স্ব রাও রাত জাগেন। এবং তা কোজাগরীর কৃপালাভের জন্য।
সোজা কথা সহজ ভাবে বললে, যাদের সম্পত্তি আছে তারা পূজো করেন সেই সম্পত্তি রক্ষা তথা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য আর যাদের সম্পত্তি নেই মানে সহায় সম্বল হীন, তারাও পূজা করেন সম্পত্তি লাভের আশায়।
রাত জাগে জুয়া খেলোয়াড়ও- কথিত আছে শুধু বাড়ির লোকেরাই নয়, কোজাগরীর দিন লক্ষ্মীলাভের আশায় রাত জাগেন জুয়া খেলোয়াড়রাও। কোজাগরীরর রাতে পাশা বা জুয়া খেলোয়াড়দের প্রতিও লক্ষ্মীদেবী সুপ্রসন্ন হন বলে অনেকেরই বিশ্বাস। তাই হয়ত তিনি ” নিশীথে বরদা লক্ষ্মী:”।
লক্ষ্মীদেবীর অষ্টরূপ:-
দেবী লক্ষ্মী শুধু ধন বা সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবীই নন, তিনি নানান চাহিদা ও বাসনার বরদায়িনী দেবীও বটে। দেখে নেওয়া যাক দেবীর আশীর্বাদের একাধিক রকমফের।
১)আদি লক্ষ্মী বা মহালক্ষ্মী:-এটি লক্ষ্মীর আদি রূপ এবং ভৃগুর কন্যা হিসেবে লক্ষ্মীর অবতার। আদিরূপে লক্ষ্মী পূজিতা হন এই মত বিশ্বাসেও।
২) ধনলক্ষ্মী- দেবী লক্ষ্মীর অর্থ ও স্বর্ণ দান করার বিশেষ রূপ। আমাদের বিশ্বাসে দেবী লক্ষ্মীর আশিসে অর্থ ও সোনাদানা লাভ করতে পারব।
৩)ধান্য লক্ষ্মী:- এখানে নগদ অর্থ বা স্বর্ণ নয়, বরং ধান্য লক্ষ্মী পূজিত হয় কৃষি সম্পদের দেবী রূপে। চাষাবাদের দেবী রূপেও তিনি পূজিতা।
৪)গজলক্ষ্মী-এখানে কৃষি সম্পদ বা অর্থ কিংবা সোনা নয়, বরং দেবী লক্ষ্মীর এই রূপ পুজিত হয় গবাদি পশু ও হস্তির সম্পদাত্রী হিসেবে পুরাণ অনুযায়ী গজলক্ষ্মী দেবরাজ ইন্দ্রকে সমুদ্রগর্ভ থেকে তাঁর হারানো সম্পদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বসুধা নারায়ণ “গজলক্ষ্মী” শব্দটির ব্যাখ্যা করেছেন গজ অর্থাৎ হাতিদের দ্বারা পূজিত লক্ষ্মী হিসেবে।
৫)সন্তানলক্ষ্মী:-
লক্ষ্মী দেবী শুধু ধন-সম্পদ বা কৃষিরই অধিষ্ঠাত্রী নয় পঞ্চম রূপে লক্ষ্মী দেবী আসলে সন্তান কামনারও দেবী।
৬)বীর লক্ষ্মী বা ধৈর্য লক্ষ্মী:- * এখানে লক্ষ্মী দেবীর আশীর্বাদে বীরত্ব এবং জীবনযুদ্ধে সাধারণের জীবনে কঠিন সময়ে ভরসা যোগানোর দেবী হিসেবেও পূজিতা হন।
৭)বিজয়লক্ষ্মী বা জয়লক্ষ্মী বিজয়ের পাশাপাশি দৈনন্দিনের জীবনে বাধা-বিপত্তি জয় করে জীবনযাত্রা পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও আশীর্বাদ প্রদান করে।
৮)বিদ্যালক্ষ্মী:- এখানে লক্ষ্মী দেবী হলেন জ্ঞানের দেবী। কলা ও বিজ্ঞানের দেবী হিসাবে তাই তিনি পূজিতা।
যাই হোক দেবীর এই আট রূপের কোন কোন দেবীর আশীর্বাদ আপনি চান দেখে নিন এবং আজ রাত জেগে দেবীর আশীর্বাদধন্য হতে কোজাগরী পুজোয় মেতে উঠুন।
(লেখকের মতামত নিজস্ব )
Post Comment