সুজয় দত্ত ও বিশ্বজিৎ সিং সর্দার :
লেপার্ড নয়, নয় চিতাবাঘ। পুরুলিয়া সীমান্তে চাণ্ডিলের বনে ঘুরছে আস্ত একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ঝাড়খন্ড বনবিভাগের অনুমান বাঘ এসেছে পালামৌ থেকে। যে এলাকায় মিলেছে পূর্ণ বয়স্ক বাঘের পায়ের ছাপ সেখান থেকে সড়কপথে পুরুলিয়ার বলরামপুরের দাঁতিয়ার সীমানা মাত্র ২৪ কিমি হলে প্রকৃত দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। এদিকে ওই পদচিহ্ন থেকে স্পষ্ট এক রাতে ওই বাঘ প্রায় ১২ থেকে ১৫ কিমি হাঁটছে। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে ঝাড়খন্ড ছুঁয়ে থাকা পুরুলিয়ার বলরামপুর, বাঘমুন্ডির গ্রামগুলিতে।

সরাইকেলা-খরসোঁওয়ার চান্ডিল বনাঞ্চলে জারি রেড অ্যালার্ট। এদিকে পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ এদিন ঝাড়খন্ড ছুঁয়ে থাকা বলরামপুর, মাঠা, বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলে গিয়ে সেখানকার রেঞ্জ আধিকারিক ও বনকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। একইভাবে কোটশিলা ও ঝালদা রেঞ্জ আধিকারিকদের সঙ্গেও ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি। আজ থেকেই শিফট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টা ডিউটি চালু হয় এই রেঞ্জগুলিতে।
শুক্রবারই ঝাড়খন্ড বন বিভাগ নিশ্চিত হয়ে যায় যে ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোঁওয়া
বনবিভাগের চান্ডিল রেঞ্জ ও খুঁটি বনবিভাগের তামাড় রেঞ্জ সীমানায় প্রায় ১০ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়ে যে বন্যপ্রাণীর পায়ের ছাপ মিলেছে তা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। লেপার্ড, চিতাবাঘ বা বাঘিনীর নয়।

শুক্রবার একের পর এক পায়ের ছাপ থেকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে পুরুলিয়া লাগোয়া ঝাড়খন্ডে গবাদি পশুর ওপর হামলা চালানো ওই বন্যপ্রাণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার-ই। কেন এভাবে নিশ্চিত হচ্ছে বন দপ্তর? পায়ের ছাপ ও দাঁতের দাগ তাদের নিশ্চিত করাচ্ছে। বন্যপ্রাণির পায়ের ছাপ নিজেদের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সংগ্রহ করছেন ঝাড়খন্ড বনবিভাগের কর্মীরা। তারা জানিয়েছেন, পায়ের ছাপের পরিমাপ ১০ সেন্টিমিটারের বেশি। অন্যদিকে তার হামলায় মৃত গবাদি পশুর গলায় দাঁতের কামড়ে যে ক্ষত রয়েছে তার থেকেই তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন যে ওই বন্যপ্রাণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়া আর কিছু নয়। সঙ্গে রয়েছে শিকার করার ধরন। মঙ্গলবার সকালে যে গবাদি পশুর ওপর হামলা চালায় বন্যপ্রাণটি সেই শিকার করা পশু বনদপ্তর চান্ডিল বনাঞ্চলের চৌকা থানার তুলগ্রাম বালিডির ওই জঙ্গলেই রেখে দেয়। সেখানে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়। বাঘ কিন্তু আসেনি। শিকার করা গবাদি পশুর দেহে এই চারদিনে পচন ধরেছে। আর সেকারণেই সেখানে বাঘ আসবে না। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পচে যাওয়া মাংস খায় না। ওই ট্র্যাপ ক্যামেরা বালিডি জঙ্গল থেকে খুলে অন্যত্র লাগানো হচ্ছে। আপাতত মোট চারটি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
চান্ডিল রেঞ্জ আধিকারিক শশীরঞ্জন প্রকাশ বলেন, “শুক্রবার চান্ডিল ও তামাড় রেঞ্জ এলাকার সীমানায় ১০ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়ে আমরা যে বন্যপ্রাণের পায়ের ছাপ দেখেছি তা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পায়ের ছাপ। তামাড় রেঞ্জ দিক থেকে আসছে বাঘটি। আমাদের অনুমান বাঘটি চান্ডিল বনাঞ্চলের জঙ্গলেই রয়েছে। ২৪ ঘন্টা নজরদারি চলছে। এই এলাকার মানুষজনদের জঙ্গলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।”

শুধু ওই দুই রেঞ্জের সীমানা এলাকাই নয়, চান্ডিল ছুঁয়ে থাকা সুবর্ণরেখা নদীর চরে বাঘটি জল পান করতে এসেছে, ফিরেও গেছে। সেই পদচিহ্ন পেয়েছে ঝাড়খণ্ড বন বিভাগ।বালিডি পাহাড়ে বাঘের পায়ের ছাপও পাওয়া গেছে।
ঝাড়খণ্ডের ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞদের দাবি, সম্ভবত এই বাঘটি পালামৌ থেকে এসেছে। এবং এসেছে জিনাতের টানে। তিন বছরের সদ্য যুবতী শার্দূল সুন্দরী জিনাত এই এলাকায় ছিল সেই সুন্দরীর টানেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের এসেছে। জিনাতের ফেলে আসা পথে তাকে না পেয়েই চান্ডিল
বনাঞ্চল কার্যত তারই খোঁজে চষে বেড়াচ্ছে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
প্রেমিকার সন্ধানে আশিক সাহেব পুরুলিয়ার সীমানায়। ১০ কিমি ব্যাসার্ধে তার অসংখ্য পদচিহ্ন।পর্যটনের ভরা মরশুমে তাই একাধিক সাবধানতা নিচ্ছে প্রশাসন। পর্যটকরা যাতে ঘন জঙ্গলে যেতে না পারেন সেই জন্য অযোধ্যা পাহাড়তলির রেঞ্জগুলিতে শনিবার থেকে টহল চালাবে বন দপ্তর। একইভাবে অযোধ্যা পাহাড় ও পাহাড়তলির সরকারি, বেসরকারি সমস্ত কটেজ, রিসর্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পর্যটকরা যাতে বনদপ্তরের নিয়ম নীতি মেনে চলেন। ওড়িশার বাঘিনী জিনাত যেভাবে তিন রাজ্যের বনবিভাগকে নাজেহাল করেছে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তাই আগেভাগেই সতর্ক পুরুলিয়া বনবিভাগ।
Post Comment