নিজস্ব প্রতিনিধি, বেগুনকোদর:
একসময় যাকে ঘিরে রহস্য আর ভয়ের গল্প ছড়িয়েছিল, সেই বেগুনকোদর আজ রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে এক ঐতিহাসিক গন্তব্য। পুরুলিয়ার ঝালদা ২ নং ব্লকের এই এলাকার নাম বিশ্বে কুখ্যাত হয়েছিল শুধু ভুতুড়ে স্টেশনের জন্যই। অন্যদিকে বেগুনকোদরের ভাণ্ডারে রয়েছে প্রায় দুশো বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবও। যদিও বেগুনকোদর রেল স্টেশন আর বেগুনকোদর জনপদ দুটি সম্পূর্ণ পৃথক স্থান, যদিও কোনকালেই বেগুনকোদর স্টেশনে কোন ভূত ছিলো না, সবই রটনা মাত্র, তবু যেটা ছিলো তা হলো ভুতুড়ে পর্যটন।
এবার রাজ্যের পর্যটন দপ্তর বেগুনকোদরের ইতিহাসকে স্থাপন করছে ঐতিহ্যর অলংকারে।
বেগুনকোদরের রাস মন্দির, যার স্থাপত্য বৃন্দাবনের আদলে গড়া, রয়েছে ১০৮টি দরজা—যেন গোপন রহস্যে ভরা ইতিহাসের সাক্ষী। ১২৫৮ থেকে ১২৯৪ বঙ্গাব্দের মধ্যে জমিদার জগন্নাথ সিংহের আমলে লোচনকুমারী বৃন্দাবন থেকে ফিরে এসে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
বর্তমানে দেড় কোটিরও বেশি টাকার প্রকল্পে রাস মন্দিরের সংস্কারকাজ চলছে রাজ্যের পর্যটন বিভাগের উদ্যোগে। গত ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া এই কাজ সম্পূর্ণ হলে মন্দিরটি আগের শিল্পরূপে ফিরবে—নানান কারুকাজ ও আলোকসজ্জায়।
বেগুনকোদরের রাস হলো প্রতিপদের রাস। তবে বুধবারই গোপীনাথজির মন্দির থেকে রাধা–কৃষ্ণের বিগ্রহ আনুষ্ঠানিকভাবে রাস মন্দিরে আনা হয়। বৃহস্পতিবার প্রতিপদ তিথিতে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতোর হাত ধরে শুরু হয় এবারের রাস উৎসব। উপস্থিত ছিলেন বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন ও সমাজসেবী উজ্জ্বল কুমার। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা বার্তাও পাঠ করা হয় অনুষ্ঠানে।

পাঁচ দিনের এই রাস উৎসবে সন্ধ্যা নামলেই শত খোলের কীর্তনে মুখর হয় বেগুনকোদর। রাধা–কৃষ্ণের পরিক্রমা, মিঠাই ভোগ, ভাগবত পাঠ, নৃত্যানুষ্ঠান—সব মিলিয়ে উৎসবের আবহে ভরে ওঠে গোটা গ্রাম। শেষ দিনে হয় ‘জাগরণ’—যেখানে নাচ, গান ও ছৌ নৃত্যে রাধাকৃষ্ণের জাগরণ উদযাপন করেন স্থানীয়রা।
বেগুনকোদরের রাস শুধু ধর্মীয় নয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংযোগেরও প্রতীক। এখান থেকে মাটি নিয়ে পুরুলিয়া শহরের ধীবরদের রাস পালিত হয়—অবিচ্ছিন্ন ঐতিহ্যের সেই বন্ধন আজও অটুট। ভুতুড়ে গালগল্প পেরিয়ে বেগুনকোদর এখন রাজ্যের হিস্টরিক্যাল ট্যুরিজমের নতুন অধ্যায় লিখছে।











Post Comment