সুজয় দত্ত ও বিশ্বজিৎ সিং সর্দার :
রাত তখন গভীর। যমুনাগোড়ার জঙ্গলে ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। গাছের ওপর মাচা বেঁধে বসে আছেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা। রয়েছেন হুলা পার্টির কয়েকজন অসম সাহসী সদস্যও। অপেক্ষা, যদি আসে জিনাতের আশিক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। কারণ একটাই। এই বাঘের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন যেদিকেই সে যাক, ফিরে আসছে জিনাতের এই প্রাক্তন ডেরাতেই। কিন্তু রবিবার রাতের অপেক্ষা ব্যর্থ। আসেনি বাঘ। এমনকি এদিন কোন ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরাও পড়েনি তার ছবি। তবে কি ফের ঝাড়খণ্ডে চলে গেল জিনাতের আশিক? না। হয়নি তেমনটাও। বন দফতর নিশ্চিত বান্দোয়ান দুয়ারসিনি রাস্তা পার করেনি সে। কারণ সেখানে তন্নতন্ন করে খুঁজেও মেলেনি পদচিহ্ন। তাঁদের অনুমান বাঘ এখনও আছে বান্দোয়ানের কাঁটাপাহাড়-ঘাঁটিহুলি- রাইকার অরণ্যেই।

শনি ও রবিবার পরপর দুদিন বন দফতরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বাঘের ছবি। বান্দোয়ানের ভাঁড়ারি টিলার যমুনাগোড়ার জঙ্গলে রবিবার সকাল ৫.৫১ তে বন দফতরের লাগানো দুটি ভিন্ন ক্যামেরাতে বাঘের দুটি ছবি ধরা পড়েছে। পাশেই ছিল সবুজ খাঁচা। তাতে টোপ। আর টোপের দিকে যাতে বাঘকে টেনে আনা যায় তার জন্য স্প্রে করা হয় বাঘিনীর মূত্র। কিন্তু সেদিকে যাওয়া তো দূর, একবার ফিরেও তাকায়নি জিনাতের আশিক।

বাঘবন্দি অভিযানের টানা আটচল্লিশ ঘন্টার প্রথম পর্যায়ে রবিবার বাঘ এসে পড়েছিল বাঘবন্দি দলের মুখোমুখি। পটকা আর হুলা পার্টির আওয়াজে তিতিবিরক্ত হয়ে করেছিল ক্রুদ্ধ গর্জন। অভিযান মাঝপথে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় দলটি। বন দফতর সূত্রে জানা গেছে আটচল্লিশ ঘন্টার রয়্যাল বন্দি অভিযান শুরু হয়েছিল শনিবার বিকালে। সে-সময় একের পর এক পটকার আওয়াজে জিনাতের আশিক মানবাজার ২ নং বনাঞ্চলের বোরোর আঁকরোর কুলডি গ্রামে চলে আসে। তারপর আবার বান্দোয়ান ১ নং বনাঞ্চলের রাইকা পাহাড়ের কাছে ভাঁড়ারিতে চলে আসে। ফলে রবিবার বিকেলে এই জঙ্গলে নতুন করে ১১টি ট্র্যাপ ক্যামেরা লাগানো হয়। কিন্তু এবার সে ছবি তোলেনি।

রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) সিঙ্গরম কুলান ডাইভেল বলেন, ” রবিবার ভোরের দিকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দুটো ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তারপর বাঘটি ঘাঁটিকুলি এলাকায় যাওয়ার পদচিহ্ন মেলে। সেখানে একটি পুকুরে জল খায় । সেখানে পায়ের ছাপ পাওয়া যায়। কিন্তু তারপর আর তার অবস্থান জানা যায়নি। অভিযান চলার সময় বাঘের গর্জন আমরা শুনতে পাই। ফলে কিছুক্ষণ বন্ধ রেখে আবার নতুন করে অভিযান শুরু হয়েছে।”

অন্যদিকে অরণ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে যে, ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটির ছবিগুলি তার গায়ের ডোরাকাটাগুলো ঠিক কেমন তা বোঝার জন্য ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়াতে পাঠানো হবে। কারণ জঙ্গল ভেদে বাঘের স্বভাব, প্রকৃতি যেমন আলাদা হয় তেমনি ডোরাকাটাও হয় আলাদা আলাদা। এই বাঘটি কোন এলাকার সেই তথ্য কিছুটা হলেও স্পষ্ট হতে পারে তাতে।




Post Comment