নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝালদা:
আগে ভোট না আগে শিক্ষা?
আগে পড়ুয়াদের পুষ্টি না আগে ভোট?বিদ্যালয়ে আছেন সবেধন নীলমনি একজন মাত্র শিক্ষক। তিনিও নির্বাচন কমিশনের বিএলও! তাই তালা বন্ধ স্কুল। বন্ধ মিডডে মিল। ঘটনা ঝালদা ১ নং ব্লকের তুলিন বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
কারণ, গোটা স্কুলে একজনই শিক্ষক আছেন। রোহিতকুমার সাহু। তিনি আবার এই সময় নির্বাচন কমিশনের বিএলও। তাই কখনও প্রশাসনিক বৈঠকে, কখনও ভোটার তালিকা সংশোধনে বাড়ি বাড়ি ঘোরা—ফলে স্কুল থাকছে তালাবন্ধ। একই ছবি পাশের চৌপদ প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। সেখানকার একমাত্র শিক্ষিকা শশীকলা মাহাতো বলছেন, “সকালে ক্লাস নিচ্ছি, দুপুরে বেরোতে হচ্ছে বিএলও-র কাজে। স্কুল চালিয়ে রাখা দুঃসাধ্য।”
ফলে পঠনপাঠন কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। মিড–ডে মিল বন্ধ হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়াদের পুষ্টিও। সবচেয়ে করুণ পরিস্থিতি একশিক্ষক বিদ্যালয়গুলোতে। অভিভাবকদের ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।
এই অবস্থায় হস্তক্ষেপ করলেন পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি তথা বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন। মঙ্গলবার জারি হওয়া আদেশে তিনি জেলা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের নির্দেশ দেন—যে সব স্কুলে একজন মাত্র শিক্ষক রয়েছেন, সেখানে সন্নিহিত বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক পাঠাতে হবে। যাতে বিএলও দায়িত্বে থাকা শিক্ষক না থাকলেও ক্লাস বন্ধ না হয়।
কিন্তু শিক্ষা দপ্তরের ভিতরেই উঠছে নতুন প্রশ্ন। নির্বাচন কমিশন শিক্ষকদের বিএলও করলেও, শিক্ষা দফতরকে সে বিষয়ে কোনও লিখিত নির্দেশ দেয়নি। এই নিয়েই কয়েকদিন আগে পুরুলিয়ায় সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সরাসরি কমিশনকে নিশানা করেছিলেন শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
তুলিন বিদ্যালয়ের শিক্ষক রোহিতকুমার সাহু বলছেন, “আমি একাই স্কুলের শিক্ষক । এখন আবার বিএলও-র দায়িত্ব। শিক্ষা দপ্তরকে জানিয়েছি, কিন্তু স্কুল তালা না দিলে উপায় নেই।”

ঝালদায় প্রশ্ন উঠছে, ভোটের জন্য গণতান্ত্রিক কর্তব্য পালন জরুরি, কিন্তু সেই কাজ করতে গিয়ে যদি ছোটদের পড়াশোনা আর দেহের পুষ্টির ব্যবস্থা করার আগেই বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের দরজা, তবে ভোট কাদের জন্য? ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বড় হবে স্কুলে না ভোটের বুথে?











Post Comment