insta logo
Loading ...
×

বাংলা বিহার ঝাড়খণ্ডের খতরনাক ‘ডন’ পুরুলিয়া পুলিশের জালে

বাংলা বিহার ঝাড়খণ্ডের খতরনাক ‘ডন’ পুরুলিয়া পুলিশের জালে

সুইটি চন্দ্র, পুরুলিয়া:

“ডন কো পকড়না মুশকিল হি নহি, না মুমকিন ভি হ্যায়!” সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখালো পুরুলিয়া পুলিশ।

প্রায় দু’দশক ধরে পূর্ব ভারতের অপরাধ জগতের অঘোষিত ‘ডন’ হিসেবে রাজত্ব করছিল সে। কিন্তু তার কোনও ছবি, ঠিকানা, কিংবা মোবাইল নম্বর পর্যন্ত ছিল না পুলিশের হাতে। অথচ দাপিয়ে বেড়াত বাংলা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের রেল সিন্ডিকেটে। সেই রহস্যময় ‘বেতাজ বাদশা’ পিন্টু ঘোষকে অবশেষে গ্রেফতার করল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।
গত শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা বাজার এলাকা থেকে তাকে পাকড়াও করে পুলিশ। ধৃতের আসল নাম দীপঙ্কর ঘোষ (৫৬)। তার বিরুদ্ধে একাধিক খুন, তোলা আদায় এবং রেল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে।
পিন্টুর গ্রেফতারের সূত্রেই পুলিশের হাতে আসে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী, বিহারের জুগনু সিং ওরফে ধর্মেন্দ্র সিং। ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার চিড়াচাস এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। শনিবার দুই অভিযুক্তকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
২০২৩ সালের ২২ জুন রেলশহর আদ্রায় তৃণমূল শহর সভাপতি ধনঞ্জয় চৌবে খুনের ঘটনায় মূলচক্রী হিসেবে উঠে আসে পিন্টুর নাম। তদন্তে জানা যায়, পিন্টু-ই জুগনু সিংয়ের মাধ্যমে সুপারি কিলারদের সংগঠিত করে এবং অস্ত্র, মোটরবাইক ও টাকা সরবরাহ করেছিল।

ধৃত পিন্টু ও জুগনু


পুরুলিয়ার আদ্রার বেনিয়াশোল এলাকার সাধারণ সংবাদপত্র বিক্রেতা দীপঙ্কর ঘোষ কীভাবে রেল সিন্ডিকেটের ডন হয়ে উঠল, তার কাহিনি রীতিমতো সিনেমার মতো। ২০০৩ সালে রেলশহর আদ্রার আশিস–আসলাম জোড়া খুনের পর থেকেই কার্যত ‘ডন’ হয়ে ওঠে পিন্টু। এরপর থেকে খুন, হুমকি ও তোলাবাজির মাধ্যমে গড়ে তোলে বিপুল সাম্রাজ্য। রেলের দরপত্র কে পাবে? নিলামের শেষ ডাক কার—সব কিছুতেই শেষ কথা পিন্টু ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিগত দুই দশকে পিন্টু ঘোষ অন্তত দশটিরও বেশি খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। ঝাড়খণ্ড ও বিহারের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। বর্তমানে সে উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা থানার দুর্গানগরের রবীন্দ্রপল্লিতে স্ত্রীর নামে থাকা বিলাসবহুল বাড়িতে থাকত। এলাকায় জমি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ‘ঘোষ দা’-র বাড়ি ঘিরে ছিল একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা। এমনকি তার নামে একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে, যা এখন ভাড়া দেওয়া।
যদিও পুলিশের হাতে কোনও নির্দিষ্ট সূত্র ছিল না, তবু একজন স্কেচ আর্টিস্টের তৈরি ছবির ভিত্তিতেই অভিযান শুরু হয়। পরে দেখা যায়, সেই স্কেচের সঙ্গে ধৃতের চেহারার মিল প্রায় নেই বললেই চলে।
অন্যদিকে, পিন্টুর সহযোগী জুগনু সিং বিহারের মুজফফরপুর জেলার কাটরা থানার ধনউড় গ্রামের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধেও বিহার ও ঝাড়খণ্ডে দশটিরও বেশি মামলা রয়েছে। বিহার পুলিশ তার গ্রেফতারে ৫০ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। জানা গেছে, ২০১৮ সালে তৃণমূল নেতা হামিদ আনসারি খুনেও তার যোগ ছিল। ২০২৩ সালে ধনঞ্জয় চৌবে খুনের আগে বোকারোতে শুটারদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল জুগনু।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২০০৩ সাল থেকে একের পর এক অপরাধের পর নিজেকে আড়াল করে রেখেছিল পিন্টু। ধনঞ্জয় চৌবে খুনের মূলচক্রী সে-ই। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও ধৈর্যের ফলেই এই সাফল্য এসেছে। দুষ্কৃতীরা যতই বুদ্ধিমান হোক, একসময় না একসময় ভুল করেই বসে। সেই ছোট্ট ভুলই এই সাফল্যের চাবিকাঠি।”

Post Comment