পুরুলিয়া মিরর ডিজিটাল ডেস্ক:
শীতের সন্ধ্যায় শুধু নৃত্যায়ন। আর ওই নাচের অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় উপচে পড়লো শহর পুরুলিয়ার একটি সাংস্কৃতিক সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানে। যেখানে ভরতনাট্যম থেকে সৃজনশীল। নৃত্যকলায় রঙিন হলো পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবন।
ওই নৃত্য প্রতিষ্ঠানের শুধু বার্ষিক অনুষ্ঠান নয়। এবার ছিল ২৫ বছর। তাই অনুষ্ঠানের পরতে পরতে রজত জয়ন্তীর সোনালী আভা যেন ঠিকরে পড়ে শিল্পীদের নৃত্যায়নে। তাই গত শনি ও রবিবার পৌষালী সন্ধ্যা যেন হয়ে ওঠে সংস্কৃতির জয়গাথা।
ওই অনুষ্ঠানের শেষ দিন রবিবার জেলার সংস্কৃতিমনস্ক মানুষজনদের সঙ্গে হাজির ছিলেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিও এই নৃত্যানুষ্ঠান দেখে অভিভূত। দুদিন ধরে ধ্রুপদ ভরতনাট্যম ও সৃজনশীল নৃত্যের ছন্দময়ে ২০০-র বেশি শিল্পীর পদ ছন্দে এক অন্য মাত্রা যোগ করে ওই পৌষালী সন্ধ্যা।
চাঁদ সদাগরের পুজো পেয়ে দেবীত্ব অর্জন করেছিলেন মা মনসা। লুপ্তপ্রায় সেই পৌরাণিক লোককথাকে ওই অনুষ্ঠানে ফিরিয়ে আনে শহরের নামকরা ওই নৃত্য প্রতিষ্ঠান। যেন আলাদা নজর কাড়ে মনসামঙ্গল। ওই নৃত্য পরিবেশন করা তথা এই সংস্থার কর্ণধার, নৃত্যশিল্পী সুমিত রায় বলেন,” আমাদের রজত জয়ন্তী বর্ষের অনুষ্ঠান যে ভাবে সাড়া পেয়েছে তাতে আমরা সারা বছর ছন্দে থাকার অনুপ্রেরণা পেলাম।
আমাদের ওই দুদিনের অনুষ্ঠানে ২০০ জনের বেশি শিল্পী ছিলেন। “
সদ্য পা ফেলতে শেখা শিশু থেকে সত্তরোর্ধ নৃত্যশিল্পী গুরু সুজয় ঠাকুর মঞ্চে তাদের প্রতিভার পরিচয় দেন। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি, গুরু সুজয় ঠাকুর, রাজর্ষী চট্টোপাধ্যায় ও উদয়শঙ্কর দে। ভরতনাট্যম-র “মার্গম” আলারিপু, যতিস্বরম,শব্দম,পদম, বর্ণম ও তিল্লানা একযোগে প্রথমবার প্রদর্শিত হলো পুরুলিয়ার ওই মঞ্চে। ওই নৃত্যানুষ্ঠান প্রমান করলো লোকসংস্কৃতির আকর ভূমি পুরুলিয়া শাস্ত্রীয় নৃত্যেও অগ্রগণ্য। পাখি, পুতুল, ছেলেবেলা, প্রকৃতি, মহাকাশ, বন্ধু, অরণ্য, প্রভৃতি থিম ভিত্তিক নৃত্যায়ন ছাড়াও সলিল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ ও সদ্য প্রয়াত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী রশিদ খাঁ-র স্মরণে নৃত্য নিবেদিত হয়। রাজকাপুরের জন্মশতবর্ষে নৃত্যার্ঘ অর্পণ করে মানবাজার নৃত্যম কলা কেন্দ্র।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নৃত্য শিল্পী গুরু সুজয় ঠাকুর ও ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী বিশ্বপ্রতীম বসুর বিশেষ নিবেদন দর্শকদের মোহবিষ্ট করে রাখে। প্রথম দিনের প্রধান আকর্ষণ ধ্রুপদ ছন্দে মনসা-মঙ্গল। সকলের চোখ টানে। মনসার চরিত্রে তরুণী নৃত্যাঙ্গনা সুনিতা হালদারের অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে মুখ্য বিষয় ছিল নৃত্যায়ন “মায়ের কথা”। এই পর্বে শিল্পীদের নৃত্যদক্ষতা আলাদাভাবে নজর কাড়ে। ওই সংস্থার ২৫ বছর উপলক্ষে জেলার ২৫ জন ব্যক্তিত্বকে সম্বর্ধনা জানানো হয়।
Post Comment