insta logo
Loading ...
×

আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আবেগ-সংস্কৃতি বশে লড়ছে কাড়া

আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আবেগ-সংস্কৃতি বশে লড়ছে কাড়া

বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, বলরামপুর :

‘লাও’ত বটে, কিন্তু আনে কে? লিখেছিলেন শরৎচন্দ্র। আজও তা যেন চরম সত্য। আইন আছে, কিন্তু তাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে কাড়া লড়াই। শনিবার বলরামপুর থানার দেউলি হাইস্কুল মাঠে নেকড়ে ষোল আনা কমিটি এবং নেকড়ে উদীয়মান ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে একদিবসীয় কাড়া লড়াইয়ের আয়োজন হয়। এই লড়াইকে কেন্দ্র করে দেখা যায় কাড়া নিয়ে আগত রসিকদের ভিড়। লোকায়ত ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ঝাড়খন্ড ছুঁয়ে থাকা জঙ্গলমহল
পুরুলিয়া। আর এই জেলার লোকসংস্কৃতির মধ্যে অন্যতম কাড়া লড়াই। দীর্ঘদিন ধরে এই কাড়া লড়াই চলে আসছে এই জঙ্গলমহলে। এই লড়াই দেখতে কার্যত গ্রামের পর গ্রাম ভেঙে ভিড় জমান মানুষজন। ‌ পাশাপাশি মেলা উপভোগ করার জন্য মাঠ উপচে পড়া হাজার হাজার দর্শক।
প্রতিবছরই এখানে ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর গ্রামবাসী এবং কমিটির বিশেষ আগ্রহ থাকায় এই কাড়া লড়াই-এর আয়োজন করা হয়। আসলে সাবেক মানভূমে কাড়া লড়াই
শুধু বিনোদনের অঙ্গ হিসেবে নয় প্রাচীন সংস্কৃতি হিসাবে মিশে রয়েছে। রয়েছে মানভূম সংস্কৃতি হিসাবে এক আবেগ।
মোট সাত জোড়া কাড়া এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতা সকাল বেলা শুরু হয়। চলে দুপুর পর্যন্ত। বিজয়ী প্রথম কাড়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার রাখা হয়। দ্বিতীয় পুরস্কার ২১ হাজার। ‌পরাজিত কাড়ার জন্য ছিলো সান্ত্বনা পুরস্কারও। লড়াই চলাকালীন দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য মাঠের চারপাশ বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়। উদ্যোক্তা কমিটির উদ্যোগে মেলাতে নিয়োগ করা হয় ৬০ থেকে ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবক। জানালেন আয়োজক কমিটির সদস্য তথা রসিক শশধর মাহাতো।
প্রতিযোগিতায় হেরে গেলেও এই লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুশি রসিকরা। ‌দীর্ঘ দু-বছর ধরে নিজের কাড়াকে লালন-পালন করার পরে মাঠে নামিয়েছিলেন। বিজয়ী না হলেও কমিটির পক্ষ থেকে সান্ত্বনা পুরস্কার পান, জানালেন কাড়ার রসিক মৃত্যুঞ্জয় মাহাতো।
জেলায় লোকায়ত সংস্কৃতির অঙ্গ কাড়া লড়াইকে ঘিরে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। জখম যেমন হয়েছেন মানুষ
তেমনই হয়েছে মৃত্যুর ঘটনা। ২০১৬ সাল নাগাদ পুলিশ এই কাড়া লড়াই বন্ধ করতে চেয়েছিল। এই ধরনের বিনোদনে শুধু দুর্ঘটনা নয় প্রাণীর ওপর অত্যাচার চলে। সেই কারণে ‘প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু এনিমেলস অ্যাক্ট,১৯৬০’ আইন প্রয়োগ করে পদক্ষেপ নিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সেই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও আবেগের কাছে কার্যত হার মানতে হয় ওই আইনকে।

Post Comment