insta logo
Loading ...
×

মানভূমের বাংলা ভাষার আন্দোলন এবং পুরুলিয়ার জন্ম

মানভূমের বাংলা ভাষার আন্দোলন এবং পুরুলিয়ার জন্ম

ড. দয়াময় রায়

মানভূমের ভাষা আন্দোলন আসলে দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত বাংলার ভাষা আন্দোলন।যা মানভূমের বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলন। কিন্তু হঠাৎ করে এত বড়ো একটা ভাষাকেন্দ্রিক সংগ্রাম সংগঠিত হয় নি। সে এক সুদীর্ঘকাল ধরে চলে আসা ব্রিটিশ উপনিবেশিকতার গর্ভ থেকে খানিকটা রিলিফ বা বেরিয়ে আসারও এক লড়াই। কেননা বণিকের মানদণ্ড যেদিন রাজদণ্ড রূপে দেখা দিল, সেদিন থেকেই এদেশের কৃষ্টি সংস্কৃতি ভাষা লোক সংস্কৃতি নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা শুরু হয়। সেই অনিচ্ছাকৃত অথচ বাংলা ভাষাভাষীদের ক্ষেত্রে এক সদর্থক পদক্ষেপ রূপে চিহ্নিত হয়েছে। যার মূলসূত্রটি খুঁজে পাওয়া যায় পরাধীনতার প্রায় নব্বুই বছর পরে।
নেপথ্যের ঘটনাক্রম— ১৮৩৭ সালে ব্রটিশ সরকার অকস্মাৎ ফার্সির বদলে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যার ফলে দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের দাবী ওঠে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে খানিকটা ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে এই সিদ্ধান্তগ্রহণ বলেই মনে হয়। তারা উর্দুর বদলে হিন্দি আর আরবীর বদলে সংস্কৃত ভাষা চালু করার ফরমান জারি করে। এখান থেকেই বিভিন্ন ভাষাভাষী বিশেষত বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বাংলা প্রদেশের প্রতি এক নিবিড় যোগ ধরে রাখার স্বপ্ন দেখে। চলতে থাকা ধিকিধিকি আগুন ঘৃতাহুতি লাভ করে আবার কুশলী ব্রিটিশের বাংলা ভাঙার চক্রান্তে (১৯০৫ )। একত্রিত জোট বদ্ধ বাংলাকে দু’টুকরো করতে পারলেই ব্রিটিশ শাসন শক্ত ভিত্তি পাবে এই উদ্দেশ্যে তাদের ১৯০৫ এর বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা।

বাংলাসহ সারাদেশের মানুষ এর বিরূদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলেন। কিন্তু বিশেষ ভাবে বাংলার মানুষের একতাকে  বিনষ্ট করতেই লর্ড কার্জন, এন্ড্রু ফ্রেজার এবং এইচ, এইচ, রিজলের এই পরিকল্পনা।
তবে বাংলার মানুষের দেশপ্রেমের কাছে তারা হার মানতে বাধ্য হয়ে বাংলা ভাঙা রদ করে কিন্তু  চক্রান্ত করে কোলকাতা থেকে দিল্লি রাজধানী স্থানান্তরকরণ আর মানভূম জেলাকে বিহার উড়িষ্যা প্রদেশের সাথে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ১৯১১ সালের ১২ ই ডিসেম্বর। রাজা পঞ্চম জর্জ সেদিন দিল্লিতে ‘ দরবার ডে’ অনুষ্ঠানে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করেন। এবং যা ১৯১২ সালের ১লা এপ্রিল কার্যকরী হবে বলে সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন।

এরই প্রতিবাদে শুরু হয় মানভূমের বাংলা ভাষা সংগ্রাম। যাকে প্রথম পর্বের ভাষা আন্দোলন রূপে চিহ্নিত করা হয়। অন্যদিকে পঞ্চম জর্জের আগমনকে কেন্দ্র করে যখন সারাদেশে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের বিরাট প্রস্তুতি ঠিক তখনি মানভূমের রামচন্দ্রপুরের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী ( পরে অসীমানন্দ সরস্বতী রূপে যিনি খ্যাত এবং ভাষাসেনানী হিসেবে এই আন্দোলনের শরিক) তীব্র বিরোধিতায় লেখেন দেশপ্রেমের আগুনজ্বলা এক কবিতা-‘ দরবার দিনে’। সেই কবিতা আজো অগ্নিময় ——-
” যারা তাঁতীর কাটলো আঙুল তাদের দেব জয়,
জীবন থাকতে নয়।…….”
এর জন্য তাঁকে শাস্তি এমনকি শারীরিক আঘাত অবধি করা হয়। কিন্তু তিনি দমবার পাত্র ছিলেন না।
আসলে ব্রিটিশ সরকার কুশলতার সাথে বাংলা ভাঙার চক্রান্ত করে —- বিহার উড়িষ্যার সচিব এইচ,এল, মেসুরিয়ার ভারত সচিবকে এক পত্রে জানান– “Bengal consists of the lower valleys of the Ganges and Bhramaputra rivers…
Manbhum on the other hand, is the first step of Chhotonagpur to the delta of lower Bengal and is general characteristics are those of on upland districts. “
এখানে রুর‍্যাল পুলিশ আইন চালু করে, ভাষা আন্দোলন কারীদের মূল বক্তব্যকে অস্বীকার করে নন্ রেগুলেটেড জেলা রূপে চিহ্নিত করে।
মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের ভাষা আন্দোলন সাধারণত  তিনটি পর্বে সংগঠিত হয়-
১) ১৯০৫–১৯১১,
২)  ১৯১২— ১৯৪৭
৩) ১৯৪৮—১৯৫৬
এই ঘটনাক্রম কিন্তু রোমহর্ষক এবং খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন—
১৯২০- ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের দাবী উঠে।
১৯২৮– লক্ষ্ণৌতেও ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের দাবী আরো জোরালো হয়ে উঠে।
১৯২৫ সালের ২১ শে সেপ্টেম্বর ঋষি নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্তের সম্পাদনায় এক আনা দামে ‘মুক্তি’ পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে।
১৯২৮ –সালের ৭ ই মার্চ রামচন্দ্রপুরের সম্মেলনে অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী প্রথম মানভূমের বঙ্গভূক্তির দাবী উত্থাপন করেন। অন্যদিকে এই সভায় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু উপস্থিত থাকেন।
১৯৩০ সালে ধানবাদ (কংগ্রেসের) সম্মেলনে মানভূম  সত্যাগ্রহ সমিতি গঠন করা হয়, যার সম্পাদক অতুল চন্দ্র ঘোষ এবং সভাপতি নির্বাচিত হন নিবারণ চন্দ্র দাশগুপ্ত।
১৯৩৫ — বাঙালি সমিতি এবং বিহারী সমিতি গঠিত হয় আর উভয়পক্ষই যথাক্রমে বঙ্গভূক্তি এবং বিহার ভূক্তির দাবীপত্র পেশ করে।
১৯৩৯ সালে সুভাষচন্দ্র বসু ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করেন। অন্যদিকে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন তীব্রতা পায় বলেই মানভূমের ভাষা আন্দোলন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়তে বাধ্য হয়।
১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট  ভারত স্বাধীনতা লাভের পর এলাহাবাদ হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি এস, কে ,ধরের সভাপতিত্বে গঠিত হয়  ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের কমিটি, যে কমিটি ১৯৪৮ সালে রিপোর্ট পেশ করে। যা আবার পর্যালোচনা করার জন্য জে, ভি, পি কমিটি গঠন করা হয়।
১৯৪৮ বিহার বিধানসভা হিন্দি ভাষার পক্ষে সুপারিশ করে। এবং মানভূম জেলা শিক্ষাদপ্তর বিদ্যালয়গুলিতে দুটি সার্কুলার জারি করে যা কালাকানুন ছাড়া আর কিছু ছিল না বলেই বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বিদ্রোহ করেন। তাহল—–
১) হিন্দি ভাষা বাধ্যতামূলক ভাবে চালু করা ও
২) দেবনাগরী ভাষার সাইনবোর্ড এবং রামধুন গীত বাধ্যতামূলক করা।
এর ফলে ভাষা আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠে, মানভূমের বাংলা ভাষী মানুষ সংগঠিত হন। তাঁরা সেকালের নেতৃত্বের কাছে জোরালো দাবীতে প্রতিবাদ করেন।
১৯৪৮ সালের ৩০ শে এপ্রিল মানভূম কংগ্রেসের জিতান গ্রামের  সম্মেলনে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং ৩৮ জন সদস্য পদত্যাগ করেন। ঠিক এক মাস পরেই (৩০–৩১ মে, ১৯৪৮ ) শিল্পাশ্রমের অধিবেশনে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে মানভূম কংগ্রেস। যার ফলশ্রুতিতে লোকসেবক সংঘ গঠন।
১৯৪৮ সালের ১৩–১৪ ই জুন পুঞ্চার পাকবিড়রায় বিক্ষুদ্ধ সদস্যগণ ভাষা সংগ্রামের জন্য লোকসেবক সংঘ তৈরি করে বঙ্গভূক্তির দাবী তোলেন।


অন্যদিকে এই সময়েই ঝরিয়ার সিনেমা হলে বিরতির সময় বিজ্ঞাপিত করা হয়– ” Hindi is the mother Tongue of Manbhum, learn Hindi.” আবার বিহারে হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনে মানভূম, ধলভূম, সিংভূমে হিন্দি ভাষা প্রচার এবং প্রসারের নিবিড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যা বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের সংগঠিত হতে সহায়তা করে। ফলে, ১৯৪৮ সালের ২৩ শে অক্টোবর হুড়া থানার মাঙ্গুড়িয়ায় সত্যাগ্রহ আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া  হয়।
এদিকে ১৯৫১ সালের জনগণনায় ৮৭% বাংলা ভাষী, ১১% হিন্দি ভাষী দেখানো হয়, এখান থেকেও শুরু হয় সত্যাগ্রহ আন্দোলন।
মানভূমের ভাষা আন্দোলন প্রকৃত অর্থেই ছিল বাংলাভাষার আন্দোলন, তার সাথে ঝাড়খন্ডী বাংলাভাষাভাষী মানুষ যুক্ত ছিলেন সামনের সারিতে। কেননা এই আন্দোলনে লোকসংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম যে টুসু গান তার ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মাধ্যমে। বিশেষভাবে  বঙ্গসত্যাগ্রহ , কৃষক সংগ্রাম, খাদ্য সত্যাগ্রহ বা হাল জোয়াল সত্যাগ্রহের মাধ্যমে মানভূমের ভাষা আন্দোলন চলতে থাকে। যার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠে টুসুগান। অনেকগুলি টুসুগানের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গানটি হল
সাংসদ ভজহরি মাহাতোর সেই বিখ্যাত টুসুগান —
” শুন বিহারী ভাই…….” যা মানভূমের বাংলাভাষা আন্দোলনের সাধনার গীত, এক টুসু সংগীত। যা এক ঐক্যতানের মূর্ত প্রতীক, ভাষাবিরোধের বুকের এক উচ্চকিত প্রলয়, বাংলা ভাষা রক্ষার এক আদর্শ, মানভূমের বঙ্গভূক্তির লক্ষ্য ও লড়াইয়ের প্রদীপ্ত শ্লোগান।
মানভূমের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রাণের দ্রোহের এবং আদরের টুসুগান। গানটির রচয়িতা ভজহরি মাহাতো। এই গানের সুরে প্রকম্পিত করে তুলেছিল সীমান্ত বাংলার এই মাটি। মাঠে ঘাটে হাটে বাটে ময়দানে এই গান সেকালের বুকে স্বপ্ন আর বাস্তবতার এক সেতু বা পারাবার। জেলার মাটি ছাড়িয়ে মহান ঐতিহাসিক পদযাত্রার মুখরিত সাধন সংগীত। 
১লা নভেম্বর, ১৯৫৬ মানভূমের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া জেলা হিসেবে পুরুলিয়ার শুভ জন্মদিবস। সেই দিনের এরূপ মুহুর্তে বাংলাভাষা প্রেমী মানুষের একান্ত  আদরের প্রিয়তম এক গান স্মরণ করি । যে গানের মধ্যে সহজ সরল ভাষায় মানুষের প্রাণের আকুতি, ভাষাপ্রেম  চিন্তা চেতনার সাথে সাথে হিন্দি ভাষাভাষী মানুষদের প্রতি ভ্রাতৃপ্রেমের আবেগ ফুটে উঠে।
বাংলা ভাষা সংগ্রামের এই সেই ঐতিহাসিক এক টুসুগান।

” শুন বিহারী ভাই —“
তোরা রাইখত্যে লারবি ডাঙ্গ দেখাই,
তোরা আপন তরে ভেদ বাড়ালি
বাংলাভাষায় দিলি ছাই।
ভাইকে ভুল্যে করলি বড়
বাংলা বিহার বুদ্ধিটাই।।
বাঙ্গালী বিহারী সবাই
এক ভারতের আপন তাই।
বাঙ্গালিকে মারলি তবু
বিষ ছড়ালি হিন্দি চাই।।
বাংলা ভাষার দাবীতে ভাই
কোনো ভেদের কথা নাই।
এক ভারতে ভাইয়ে ভাইয়ে
মাতৃভাষার রাজ্য চাই।।

শুন বিহারী ভাই
তোরা রাইখত্যে লারবি ডাঙ্গ দেখাই,
পশুপক্ষির মত যারা
ডাঙ্গ দেখে দূরে পালায়।
আমরা মানুষ নইকো পশু
স্বরাজেরি অংশ চাই।।
হবু রাজার গবু মন্ত্রী
সে রাজে সুখ নাইরে ভাই।
(তাই) জনগণের শাসন হবে
মাতৃভাষার রাজ্য চাই।।
বিচার বুদ্ধি সব দেখিলাম
যুগের দাবী নাটকটায়।
নির্দোষীকে দোষী করে
পুরে দিল জেহেলটায়।।
জজ সাহেবের অবিচারে
কি পরিচয় দিব ভাই।
জনশাসন চাও যদিরে
বাংলা বই আর গতি নাই।।
মোদের ভূমি মানভূমেতে
গড়িব রাম রাজ্যটাই।
ভজহরি মনের আশায়
পারবি নারে দিতে ছাই।।”
এই লোকগানটি তো ভাষা সংগ্রামের সাধন সংগীত হয়ে  উঠে। এই গান লেখার জন্য তাঁকে শাস্তি ভোগ করতে হয়।
ভাষাসেনানী অতুলচন্দ্র ঘোষের উদ্যোগে ‘টুসুগানে মানভূম’ নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। যা সেসময় প্রায় এক লক্ষ কপি বিক্রি হয়, হাটে বাজারে সভা সমাবেশে টুসুগানের মাধ্যমে মানুষের কাছে তুলে ধরা হয় লোক সেবক সংঘের বক্তব্য, বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের কথা। অন্যদিকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন চলতেই থাকে।


এরূপ আবহেই হৃদয়নাথ কুঞ্জরু, কভ্লম পানিকর প্রমুখের নেতৃত্বে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন কাজ শুরু করে। কমিশনের কাছে বঙ্গভূক্তির দাবী সনদ পেশ করে লোকসেবক সংঘ, প্রথমবার ১২০০ এবং সংশোধনী রূপে আরো ২০০ পাতার দাবী সনদ। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলায় ভূক্তির দাবী জানানো হয় এবং বিভিন্ন স্থানে শুনানিতে অংশগ্রহণ করা হয়।
১৯৫৫ সালের ২০ শে এপ্রিল কমিশন তার রিপোর্ট পেশ করে।
অপরদিকে মানভূমের ভাষাসেনানীরা এল,এস, এসের পরিচালনায় এবং উদ্যোগে ঐতিহাসিক কোলকাতা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন ১৯৫৬ সালের ২০ ই এপ্রিল পুঞ্চা থানার পাকবিড়রা গ্রাম থেকে।  এই মহতী পদযাত্রায় অংশ নেন ১০২৫ জন সত্যাগ্রহী। যার মধ্যে অতুলচন্দ্র ঘোষ, লাবণ্যপ্রভাদেবী সহ ৯৬৫ জন গ্রেপ্তার বরণ করেন। এই আন্দোলনের ফল স্বরূপ যা সারা বাংলায় ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
১৯৫৬ সালের ১ লা নভেম্বর জেলার মানুষের আবেগ আর সংগ্রামের ভিতর দিয়ে পুরুলিয়া জেলা রূপে জন্ম লাভ করে। মানভূম এক প্রিয়তম নাম, তার  অবলুপ্তি ঘটে মানচিত্রে। আর মানভূমকে ত্রিখন্ডিত করে পুরুলিয়া জেলার জন্ম। চাষ,চন্দনকিয়ারি, ইচাগড়, চান্ডিল, পটমদা এই পাঁচটি থানার ৯১৫ বর্গমাইল এলাকা বিহারে থেকে যায়।  আর টাঁইড় বাইদ বেশির ভাগই অজলা অফলা ২৪০৭ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে পুরুলিয়া জেলার বঙ্গভুক্তি ঘটে। ষোলোটি থানার ১১৬৯০৯৭ জন মানুষ নিয়ে  সাতদিনের উৎসবে জেলার মানুষ মেতে উঠে–
” বহু মানে আজ মানভূমে মোরা
   এই শুভদিনে নিলাম বরি
   ধন্য হলেন জননী আবার
   হারানো তনয়ে বক্ষে ধরি।”
১লা নভেম্বর  আমাদের মাতৃভূমির জেলারূপে জন্মদিন, বাংলা ভাষার আন্দোলনের শুভদিন। পৃথিবীর বুকে মাতৃভাষা দিবস রূপে স্বীকৃত  বাংলাদেশের ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ । কর্নাটকের ভাষা আন্দোলন (১৯৫৩),  কাছাড়ের ভাষা আন্দোলনের(১৯৬১) অনেক আগেই এ জেলার মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন, তার প্রধান স্থপতি রূপে সংগ্রাম করেন লোকসেবক সংঘ এবং অন্যান্য সংস্থার বাংলা ভাষাসেনানীগণ।

Post Comment