দেবীলাল মাহাত, আড়শা:
জঙ্গলমহল পুরুলিয়া সহ সাবেক মানভূম জুড়ে শুরু হল ‘বাঁদনা’ পরব। বলা যায় এই অঞ্চলের মানুষের অন্যতম প্রানের উৎসব । প্রাত্যহিক জীবনের দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে কৃষিজীবী মানুষ শামিল হন এই উৎসবের আঙিনায়। আজ বৃহস্পতিবার কালিপুজার দিন থেকে এই উৎসবে মেতে উঠলেন গ্রাম বাংলার কৃষিজীবী মানুষ। যা চলবে তিনদিন ধরে। শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি এখন ঘরে ঘরে। মূলত ‘গো বন্দনা’ হিসাবে এই উৎসব বেশি পরিচিত। ‘বাঁদনা’ পরব আসলে আমন ধান বাড়িতে তোলার আগে গরু-গাভিদের বন্দনা করে কৃতজ্ঞতা জানানোর রীতি। গ্রাম বাংলার মানুষের বিশ্বাস, কালিপুজার রাতে মর্ত্যলোকের প্রতিটি বাড়িতে আসেন স্বয়ং শিব।তাই বাড়ির মহিলারা পূজোর আগে মাটির প্রলেপ দিয়ে ঘরকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলেন। সেই সঙ্গে দেওয়ালে- দেওয়ালে রঙিন চিত্র আলাদা চোখ টানে। অমাবস্যার রাতে গোয়াল ঘরে সারারাত জ্বালিয়ে রাখেন ঘিয়ের প্রদীপ ‘জাগড় হাঁড়ি’। অমাবস্যার রাতে পুরুষেরা দল বেঁধে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ঢোল- ধামসা সহকারে অহিরা গান গেয়ে জাগিয়ে রাখেন গরুকে। এদের বলা হয় ‘ঝাঙ্গড়িয়া’ ।সকালবেলা হয় ‘ঝাঁগড় নাচ’ ।পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদে আলপনা দিয়ে গোয়াল ঘর সহ আঙ্গিনাকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। যাকে বলা হয় ‘চোক পুরা’। তারপর গোয়ালে পুজো করে গরু ও মহিষদের তেল ও সিঁন্দুর দিয়ে বরন করা হয়। তৃতীয় দিন তাদেরকে পেট ভরে ঘাস,খড় খাওয়ানো হয়। তারপর গরু গুলিকে স্নান করিয়ে বিভিন্ন রঙ দিয়ে সারা শরীর ছাপ দেওয়া হয়। বিকালে হয়
গরুখুঁটা । সেখানে গ্রামের সকলেই উপস্থিত হয়। তাই প্রতিবছরের মতো এবারও আমন ধান বাড়িতে তোলার আগে বাঁদনা পরবে মেতে উঠবেন গ্রাম বাংলার মানুষ। তারই প্রস্তুতি চলছে গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে । আজ উৎসবের প্রথম দিন। আর এই উৎসবের মধ্য দিয়েই গ্রাম বাংলার মানুষ ধরে রেখেছেন তাদের ঐতিহ্য, তাদের সংস্কৃতি।
Post Comment