দেবীলাল মাহাত, আড়শা:
প্রবাদ আছে ” ভাঙা ঘরে, চাঁদের আলো”। তা যে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাবে তা ভাবতে পারেননি আড়শা ব্লকের চিতিটি গ্রামের উত্তরা মাহাত। প্রথমে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারেননি ষাটোর্ধ্ব মহিলা। তার জরাজীর্ণ ভাঙা বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন স্বয়ং আড়শা ব্লকের বিডিও গোপাল সরকার সহ আধিকারিকরা। স্তম্ভিত ফিরলে, হাতজোড় করে বলেন স্যার, “আমাকে একটা বাড়ি দিন ,আর কিছু চাই না।”
আড়শা ব্লকের মানকিয়ারী গ্রাম পঞ্চায়েতের চিতিডি গ্রাম। সেই গ্রামের শেষ প্রান্তে একা থাকেন উত্তরা মাহাত। জরাজীর্ণ ভাঙ্গা বাড়িতে তার বসবাস। অভাব, অনটন নিত্য সঙ্গী। বাড়ির ছাউনি আগাছায় ভরা। বর্ষাকালে রাস্তার জল ঢুকে পড়ে বাড়িতে। তখন আশ্রয় নিতে হয় অন্যের বাড়িতে। তবু পাননি কেন্দ্র বা রাজ্যের আবাস যোজনার ঘর। অগত্যা সেই ঘরেই কয়েকটা ছাগলকে পোষ্য করে, বসবাস করেন উত্তরা মাহাত। পোষ্যের মাঝেই ঘরের এক কোনে রান্নার উনুন।
উত্তরা মাহাতোর সেই দুর্দশার চিত্রই তুলে ধরেছিলেন দুলাল মাহাতো নামে এক ব্যক্তি। আড়শা ব্লকের বিডিওর কার্যালয়ে টেবিল থাকা” মনের পাতাতে”। ব্যস,খবর পাওয়ার ১২ ঘন্টার মধ্যে সেই উত্তরা মাহাতো বাড়িতে পৌঁছালেন আড়শা ব্লকের মানবিক বিডিও গোপাল সরকার সহ আধিকারিকেরা। বিডিও গোপাল সরকার জানান, “খবর পেয়ে জানতে পারি চিতিডি গ্রামের উত্তরা মাহাতোকে দেখার মতো কেউ নেই। ঘরের অবস্থাও খুব খারাপ। খবর পাওয়ার পরেই তার বাড়িতে আসি । এসে দেখলাম সত্যিই তার অবস্থা খুবই খারাপ।” তাই ওই মহিলাকে তিনি পশুপালন করেন শুনে হাঁসের বাচ্চা দেন। শরীর স্বাস্থ্যের খবর নেন। সাথে সাথে ত্রিপল, শীতের কম্বল, হাঁড়ি , কড়াই সহ রান্নার ত্রান সামগ্রী হাতে তুলে দেন। আগামী দিন যাতে সরকারি আবাস পান সেইজন্য নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান বিডিও। আর , উত্তরা মাহাত কি বলছেন? ” বিডিও সাহেব আমার ভাঙা বাড়িতে এসে উপস্থিত হবেন। তা ভাবতেই পারিনি। আমি আমার সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। বিডিওর কাছে আমার আর্জি আমাকে একটা বাড়ি দিন।” আশ্বাস দেন বিডিও সাহেব। সেই কথা শুনে, উত্তরার ভাঙা বাড়িতে যেন নেমে আসে চাঁদের আলো! আলো এসে পৌঁছায় উত্তরার মনেও। এই ভাবেই দিনদিন আড়শা ব্লকের দুঃস্থ , অসহায় মানুষদের পরিত্রাতা হয়ে উঠছেন বিডিও গোপাল সরকার।
Post Comment