বিশ্বজিৎ সিং সর্দার , বলরামপুর:
টিউশন পড়ে মামাবাড়ি ফিরছিল সে।গত একুশে ডিসেম্বর বলরামপুর চকবাজার এলাকায় একটি মালবাহি লরির চাকা তার সাইকেলকে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হয় কিশোরী। একেবারে যেন যমের দুয়ার থেকে ফিরে আসে সে। ডান পা পুরোপুরি ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। পায়ে হয়ে যায় গভীর ক্ষত!
বলরামপুরের লালিমতি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী অঞ্জলি সরেন। এবার সে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চলেছে। স্টিলের রড দিয়ে বাঁধা রয়েছে তার পা! সারাদিন রাত মামা বাড়ি বুরুডি গ্রামে বিছানার একজায়গায় বসে শুয়ে কাটছে তার দিন। তবুও তার মনের জেদকে সম্বল করে জীবনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পরিক্ষায় বসতে চাইছে সে। সে চাইছে তার পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দিক কর্তৃপক্ষ। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সহ আলাদা কক্ষে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করল প্রশাসন।
সাধারণত অঞ্জলির পরীক্ষায় বসার সমস্যা ছিল না। কিন্তু পরীক্ষাকেন্দ্রে তার জন্য নির্ধারিত আসনে বসে তো সে পরীক্ষা দেওয়ার অবস্থায় নেই। পায়ের উপর এখন বড় বড় স্টিল রড দিয়ে পা বেঁধে দিয়েছেন চিকিৎসক। একবছর ধরে এভাবেই থাকতে হবে তাকে। বাড়িতেই থাকতে হবে সম্পূর্ণ বেডরেস্টে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। সেক্ষেত্রে পরীক্ষাকেন্দ্রে যদি না তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়, তবে তার পক্ষে মাধ্যমিকে বসা অসম্ভব।
চার বছর বয়সে মা হারা মেয়েটি চায় আরও পড়তে। তার পাশে ভরসা হিসেবে রয়েছেন শুধু মামা ও মামিমা। লালিমতি হাই স্কুলের এই ছাত্রীর পরীক্ষার সিট চন্ডীতলা শিক্ষা নিকেতন। ছাত্রীর ওই ইচ্ছা শক্তিকে কুর্নিশ জানিয়ে তার মামার বাড়ি বরুডি গ্রাম থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স-র ব্যবস্থা করেছে বলরামপুর ব্লক প্রশাসন।
বলরামপুরের বিডিও সৌগত চৌধুরি বলেন, ” প্রতিবন্ধকতার অবস্থাতেও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ওই ছাত্রী পরীক্ষা দেবে বলে আমাদের জানিয়েছে। তার মামার বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে অ্যাম্বুলেন্সে করে পৌঁছে দেওয়া হবে। ওই স্কুলের একটি আলাদা কক্ষে সে পরীক্ষা দেবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হেলান দেওয়া খাট ও টেবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে সে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারে। “







Post Comment