দেবীলাল মাহাত, আড়শা:
এক বছর দু বছর নয়, টানা ৬ বছর নাতনির সঙ্গে দেখা হয়নি ঠাকুমাদের। ৬ বছর আগের ছোট্ট দেবদত্তা এখন আমূল বদলে গেছে। কঠিন অধ্যবসায়ে নিজেকে সাফল্যর শিখরে নিয়ে গিয়েছে সে। আর সেই সাফল্য ধারাবাহিক। দু’বছর আগে মাধ্যমিকে রাজ্যে বোর্ড ফার্স্ট। গত জানুয়ারি মাসে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা (মেন) প্রথম সেশনে রাজ্যের প্রথম স্থান। আর এবার ওই পরীক্ষারই দ্বিতীয় সেশনে সমগ্র দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে নেয় দেবদত্তা মাঝি।
তার পৈত্রিক বাড়ি পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে আড়শার জামবাদ গ্রামে। ঠাকুমা পুটরি মাঝি প্ৰিয় নাতনির মুখে মাছের মাথা দিয়ে তৈরি সুস্বাদু পদ বানিয়ে খাইয়ে দেওয়ার জন্য অপেক্ষায়। তিনি জানান, দেবদত্তা ছোটবেলা থেকেই মাছের মাথা খেতে খুব ভালোবাসে। দ্বিতীয় সেশনের পরেও ওই পরীক্ষার বৃত্তটা সম্পূর্ণ হয়নি। বাকি আছে জেইই অ্যাডভান্স। ফলে ভীষণই ব্যস্ত ওই কিশোরী। এই ফলের ভিত্তিতেই ঠিক হবে সে কোন আইআইটি কলেজে পাঠ নেবে। গ্রামের বাড়ির তরফে জানানো হয়েছে, ওই ভর্তি প্রক্রিয়া মিটে গেলেই দেবদত্তা তার বাবা-মাকে নিয়ে আসবে আড়শার জামবাদে।

অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন তিনটি বিষয়েই দেবদত্তার নম্বর একশো করে তিনশোতে তিনশো। সারা দেশে প্রায় ১১ লক্ষ পরীক্ষার্থী দিয়েছিল জয়েন্ট এন্ট্রান্সের দ্বিতীয় সেশনের পরীক্ষা৷ তিনশোতে তিনশো পেয়েছে ২৪ জন৷ তার মধ্যে দু’জন ছাত্রী। তাদেরই একজন পুরুলিয়ার দেবদত্তা।
এই পরীক্ষায় প্রথম সেশনে রাজ্যে প্রথম হয়েছিল সে। তার প্রাপ্ত পার্সেন্টাইল ছিল ৯৯.৯৯৯২১। আর এবার তার এনটিএ স্কোর একশো। এই কৃতি ছাত্রীর বাবা
জয়ন্তকুমার মাঝি ও মা শেলি দাঁ কর্মসূত্রে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়াতে থাকেন। সেখানেই কাটোয়া দুর্গাদাসী চৌধুরানি গার্লস হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক দেয় দেবদত্তা। মা শেলি দাঁ বলেন, “করোনার আগে মেয়েকে নিয়ে আমরা গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। তারপর একের পর এক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আর যাওয়া হয়নি। এবার আমরা আবার যাব।”
তার ঠাকুমা পুটরি মাঝি বলেন, “নাতনির একের পর এক সাফল্যে আমাদের খুব ভালো লাগছে।” দেবদত্তার দাদু নিধিরাম মাঝি বলেন, “একদম ছোটবেলা থেকেই ও লেখাপড়ায় ভীষণ ভালো। এবার ও উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাবে। তাই আদি বাড়ি এলাকায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা প্রয়োজন। সেজন্য দেবদত্তা আমাকে সমস্ত নথিপত্রর ছবি পাঠিয়েছে। ওই অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া শুরু করব। ওর সাফল্যে আমাদের গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে। “











Post Comment