নিজস্ব প্রতিনিধি,ঝালদা:
গ্রামবাংলার ছাত্রছাত্রীদের কাছে মহাকাশ গবেষণাকে বাস্তবের কাছাকাছি পৌঁছে দিতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়া হল ঝালদায়। শনিবার ঝালদা বন দপ্তরের রেঞ্জ অফিসে একটি শক্তিশালী টেলিস্কোপের উদ্বোধনের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুলে গেল জ্যোতির্বিজ্ঞানের নতুন দরজা। ‘শের’ সংস্থার উদ্যোগে এই টেলিস্কোপ বন দপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
উদ্যোক্তারা জানান, প্রতি শনিবার ও রবিবার নির্দিষ্ট সময়ে এলাকার ছাত্রছাত্রীরা এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করে গ্রহ-নক্ষত্র, চাঁদ ও মহাকাশ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় হাতে-কলমে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবে। বইয়ের পাতার বাইরে বেরিয়ে বিজ্ঞানকে অনুভব করানোই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
শের সংস্থার প্রতিনিধি জয়দীপ কুন্ডু বলেন, “আজকের ছাত্রছাত্রীরাই আগামী দিনের বিজ্ঞানী। শহরের সুযোগ-সুবিধা যেন গ্রামের পড়ুয়াদের কাছেও পৌঁছায়, সেই লক্ষ্যেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। টেলিস্কোপের মাধ্যমে ওরা মহাকাশকে কাছ থেকে দেখবে, প্রশ্ন করবে, জানবে,এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।”
এদিন বড়দিন উপলক্ষে ‘শের’ সংস্থা ও বন দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এলাকার খুদে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বই, খাতা, পেনসিল-সহ বিভিন্ন শিক্ষা সামগ্রী ও নতুন পোশাক বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি এলাকার মহিলাদের মধ্যে শাড়ি তুলে দেওয়া হয়। ফলে গোটা অনুষ্ঠান নেয় উৎসবের রূপ।
উদ্যোক্তাদের মতে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে একদিকে যেমন সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করা হয়েছে, তেমনই সাধারণ মানুষের সঙ্গে বন দপ্তরের সম্পর্ক আরও মজবুত করার বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে দমকল দপ্তরের উদ্যোগে বন কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। জঙ্গলে আগুন লাগলে কীভাবে দ্রুত, নিরাপদ ও কার্যকরভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়—সে বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএফও অঞ্জন গুহ, ঝালদা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সারতি মুড়া, বন কর্মাধ্যক্ষ রামজীবন মাহাত সহ ঝালদা মহকুমার সমস্ত রেঞ্জারগণ।
শিবিরে উপস্থিত থেকে মানবাজার–১ নং ব্লকের বিডিও দেবাশীষ ধর জানান, “এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিলারা যাতে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারেন, তার জন্য প্রশাসনের তরফে সব রকমের সহায়তা করা হবে।”
সংস্থার ডিরেক্টর ড. গৌরাঙ্গ কর জানান, ‘আগামী দিনে জবলাতে একটি স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি মানবাজার–১ নং ব্লককে প্লাস্টিকমুক্ত করতে মহিলাদের জুট ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে সেই ব্যাগ বাজারে সরবরাহ করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।”
জাতীয় শিক্ষক অমিতাভ মিশ্র বলেন,
“প্রশিক্ষণই শেষ কথা নয়। এই মহিলাদের হাতে তৈরি পণ্য যাতে সঠিক বাজার পায়, তার জন্য বিপণন থেকে শুরু করে সংযোগ তৈরির ক্ষেত্রেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। তবেই প্রকৃত অর্থে আত্মনির্ভরতা সম্ভব।”
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী মামণি বাউরী, সুলোচনা সহিস ও লক্ষ্মী রজক জানান, এই কাজের মাধ্যমে সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি নিজেদের আত্মসম্মানও বাড়বে বলে তারা আশাবাদী।
শিবিরের শেষ দিনে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেন বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী ড. এস. সৎপথী, ড. রীতেশ সাহা, ড. মানিকলাল রায়, জেলা পরিষদের সদস্য কলেন্দ্রনাথ মান্ডি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সবিতা মুদি, স্থানীয় উপপ্রধান গীতা মাহাতো, মহকুমা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক সমীর দত্ত ও সঙ্ঘের সম্পাদক কল্পনা মাহাতো সহ অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর প্রদর্শনী ঘুরে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলাদের আগামী দিনের পথচলায় শুভেচ্ছা ও উৎসাহ জানান।











Post Comment