নিজস্ব প্রতিনিধি, হুড়া :
ভূত দেখাতে পারলেই নগদ ৫০ লক্ষ টাকার ইনাম ঘোষণা করে দিল ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া শাখা। পাশাপাশি অর্জুনজোড়ার বাইক ধরা ভূতের খোঁজে রবিবার রাত জাগবে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ।
বিজ্ঞান মনস্ক দুটি সংগঠন যাই বলুক, ভূতের আতঙ্ক ঘিরে রেখেছে হুড়া ব্লকের অর্জুনজোড়া সহ আশেপাশের গ্রামের মানুষজনকে। অর্জুনজোড়া – কেশরগড় রাস্তায় বাইক নিয়ে পার হতে গেলেই নাকি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বাইক। অদৃশ্য কেউ নাকি সজোরে জাপটে ধরছে চালককে। আর তারপর চালকের শরীর জুড়ে আঁচড়ানোর দাগ। এই আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছে এলাকা। দু সপ্তাহ জুড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে আতঙ্কের সূত্রপাত তিন সপ্তাহ আগে। ঠিক ওই এলাকাতেই জঙ্গলে এক ১৭ বছরের কিশোরের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আর তার তিন-চার দিন পর থেকেই ঘটে চলেছে হাড় হিম করে দেওয়া অস্বাভাবিক ঘটনাগুলি।
আতঙ্কের গ্রাসে এলাকার স্কুলগুলোতে কমেছে পড়ুয়ার সংখ্যা। বিকালের পর তো দূর অস্ত, দিনের বেলাতেও ওই পথ
দিয়ে যাচ্ছেন না ওই এলাকার মানুষজন। ভূত আতঙ্কে ঘুরপথে যাতায়াত চলছে তাদের। যারা এমন অলৌকিক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন তারা এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন যে ওঝা, গুরুবাবার দ্বারস্থ হয়েছেন।
সব থেকে আগে অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী অর্জুনজোড়া গ্রামের বাসিন্দা জলধর গরাঁই। তিনি বলেন, ” দিন সাতেক আগে বিকাল তিনটা নাগাদ ওই রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। হঠাৎ ওই জায়গাতে আমার বাইক বন্ধ হয়ে যায়। স্টার্ট দিতে গেলেও কিছুতেই স্টার্ট হচ্ছিল না। তার মধ্যে কে যেন জড়িয়ে ধরল আমাকে। কিন্তু তাকে আমি চোখে দেখতে পাইনি। কেবল দেখলাম সারা শরীরে আঁচড়ের দাগ। তারপর থেকে আমার শরীরটা ঠিক ভালো যাচ্ছে না। গোটা বিষয়টা গ্রামবাসীদের জানিয়েছি জানিয়েছি। “
ওই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আতঙ্ক কাটাতে ঝালদায় গুরুবাবার কাছে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করিয়ে আসেন। তারপর আর তিনি কোন ভূত দেখেননি বলে দাবি। তবে আতঙ্কে ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। জানালেন তার পরিবারের সদস্যরা।
কয়েকজন বালক ছাড়া আর কেউ ভূতকে চোখে দেখেননি। অনুভব করেছেন কোন একজনের উপস্থিতি। এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন যে ঘরে ঘরে শুরু হয়ে গেছে কান্নাকাটির রোল।
শুধু অর্জুনজোড়া গ্রাম নয়। লাগোয়া জজডি, কুদলং, বাঘাটাড়, রামডিতেও ভূতের আতংক চেপে বসেছে। দিনের পর দিন পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে বাজার-হাট যেতে ভয় পাচ্ছেন গ্রামের মানুষজন। জঙ্গলে শুকনো পাতা সংগ্রহ করে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন। তারাও ভয়ে জঙ্গলে যেতে পারছেন না। প্রত্যেকের মনে একটাই আতঙ্ক চেপে বসেছে-‘বাইক ধরা ভূত’!
আর এই ভূতের দর্শন দেওয়াতে পারলেই ৫ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ-র পুরুলিয়া জেলা কমিটি। বুধবার তাদের প্রতিনিধি দল ওই গ্রামে গিয়ে এই পুরস্কারের কথা জানায়। দলে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ পুরুলিয়া জেলা কমিটির তিন প্রতিনিধি।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া জেলা কমিটি এক লাফে বাড়িয়ে দিয়েছে পুরস্কারের অঙ্ক। তাঁদের ঘোষণা, ওই এলাকায় ভূত দর্শন করাতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার। কুসংস্কার, বুজরুকি ঠেকাতেই এমন ঘোষণা বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়ার ওই বিজ্ঞানমনস্ক সংগঠনের নেতা মধুসূদন মাহাতো।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা কমিটি জানিয়েছে, আগামী রবিবার অর্জুনজোড়া গ্রামের ওই রাস্তায় তারা রাত জাগবেন। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় জানান, ” ভূতুড়ে স্টেশন বলে এক সময় পরিচিত বেগুনকোদরে যেভাবে আমরা রাত জেগে প্রমাণ করেছিলাম ভূত নেই, সেভাবেই অর্জুনজোড়া গ্রামের ওই রাস্তায় রাত জেগে প্রমাণ করবো ভূতের কোন অস্তিত্ব নেই। এসবই গুজব। ” এখনও অর্জুনজোড়া মোড় থেকে কেশরগড় যাওয়ার ওই ‘ভূতের রাস্তা’ পাহারা দিচ্ছে হুড়া থানার সিভিক ভলান্টিয়াররা।
Post Comment