শুভদীপ চৌধুরি, আদ্রা-
বংশে কোন কন্যা সন্তান ছিল না। তাই কন্যা সন্তানের আশায় বেনারসের অন্নপূর্ণা মন্দিরে পুজো দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন পঞ্চকোট রাজ পরিবারের জমিদার রাজারাম মিশ্র। কিন্তু শেষমেশ বেনারসের ওই মন্দিরে যেতে হয়নি। ওই জমিদার পুকুর পাড়ে দর্শন করেছিলেন লাল পাড় সাদা শাড়িতে থাকা এক ফুটফুটে কিশোরীকে। ওই কিশোরী বলেছিল, এখানেই দুর্গাপূজার সূচনা করলে কন্যা সন্তান মিলবে। পুজো শুরুর ৫ বছরের মধ্যেই ওই জমিদার বংশে কন্যা সন্তান হয়। পুরুলিয়ার রেলশহর আদ্রার পাশে রঘুনাথপুর ১ নম্বর ব্লকের আড়রা গ্রামের ওই জমিদার বাড়ির পুজো এবার ৩২৭ বছরে পড়েছে।
প্রাচীন এই পুজোয় জাকজমক না থাকলেও ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে মায়ের আরাধনাকে ঘিরে উৎসবে মাতেন এলাকার মানুষজন। এই পুজোর মাতৃপ্রতিমাতেও রয়েছে বিশেষত্ব। মা এখানে মহিষাসুরমর্দিনী নন। মায়ের কোলে থাকে গণেশ। একদিকে রয়েছে সিংহ। আরেক দিকে ষাড়। বৈষ্ণবী বৃহৎ নান্দীকেশ্বর মতে এই পুজোয় হয় চালকুমড়ো, ইক্ষু, শশা ও কলা বলি। সন্ধি পুজোয় পরপর এই বলি হয়ে থাকে। বর্তমানে এই পুজোর আয়োজক প্রদীপ মিশ্র বলেন, “এবারের পুজো ৩২৭ বছরে পড়েছে। এই পুজো করার জন্য পঞ্চকোট রাজার কাছ থেকে ৬২ বিঘা জমি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন তো আর সেইসব জমি নেই। আমরা নিজেরাই কোনোভাবে পুজো করি।” ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গড় পঞ্চকোটে এই রাজপরিবারের রাজধানী থাকার সময় রাজা গরুড় নারায়ণ সিং দেও (বলভদ্রশেখর সিং দেও) পুজোর জন্য ওই পরিবারকে ৬২ বিঘা জমি দান করেছিলেন। তখন ঘরের চালার ঘরে পুজো হতো। এখন অবশ্য মন্দির হয়েছে। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে প্রতিমা তৈরিতে খানিকটা ভাটা পড়ে। তাই মহালয়ার আগে জোরকদমে চলছে সেই মাতৃপ্রতিমা তৈরির কাজ। ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজারাম মিশ্র যখন বেনারস যাওয়ার তোড়জোড় করছিলেন। সেই সময়ই একদিন পুকুর থেকে স্নান করে ওঠার সময় লালপাড় সাদা শাড়িতে এক ফুটফুটে কিশোরীকে দেখেছিলেন। ওই কিশোরীই দুর্গাপুজোর কথা বলে।
Post Comment