নিজস্ব প্রতিনিধি, পুঞ্চা :
তিনি বাম আমলের লড়াকু সৈনিক ছিলেন তৃণমূলে। একসময় ছিলেন জেলা তৃণমূলের সর্বেসর্বা। অথচ ইদানীং দলীয় মঞ্চে তাঁর দেখা মেলে না। হঠাৎই শনিবার হাজার দুয়েক কর্মী নিয়ে পুঞ্চার রাস্তায় মিছিল করলেন সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। সেনাবাহিনীকে কুর্নিশ ও ওবিসি সংরক্ষণের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ— এই দু’টি ইস্যু হলেও, জেলাজুড়ে আলোচনার মূল বিষয় হয়ে উঠেছে একটাই প্রশ্ন— ফের কি ক্ষমতার অলিন্দে ফিরছেন সুজয়? না কি এই মিছিল ক্ষমতায় থাকা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনের একটা স্পষ্ট বার্তা?
মিছিল শেষে পথসভায় দাঁড়িয়ে সহ-সভাধিপতির বক্তব্য, “আমি পদ চাই না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত সৈনিক ছিলাম, আছি। আজকের মিছিল বানচাল করার চেষ্টা হয়েছে দলের মধ্য থেকেই।” এই মন্তব্যেই যেন ধরা পড়ে তাঁর অভিমান আর অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, লৌলাড়া কলেজ সংক্রান্ত একটি বিতর্কে নাম জড়ানোয় প্রস্তাবে শীর্ষে থাকা সত্বেও এবার জেলা সভাপতির পদে ঠাঁই হয়নি তাঁর। নতুন জেলা সভাপতি হন বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীব লোচন সরেন। এরপর দীর্ঘ এক মাস প্রশাসনিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনও দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেননি। শনিবারের মিছিল তাই শুধু ‘ধন্যবাদ মিছিল’ নয়, অনেকের চোখেই তা অসন্তুষ্ট নেতার ‘ক্ষমতা প্রদর্শন’।

তবে বিতর্ক এখানেই থেমে নেই। পুঞ্চা ব্লক তৃণমূল সভাপতি অশোক মাহাতো জানিয়েছেন, “ওটা ওঁর ব্যক্তিগত কর্মসূচি। দলীয় কর্মসূচি নয়। আমরা কেউ সেখানে ছিলাম না।” দলের ভিতরের এই প্রকাশ্য মতবিরোধেই পরিষ্কার, সবকিছু ঠিকঠাক নেই তৃণমূল জেলা নেতৃত্বে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, কয়লা দুর্নীতিতে নাম জড়ানো, ইডির তলব, দলে গুরুত্ব কমে যাওয়া— সব মিলিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন সুজয়। তবে শনিবারের জমায়েত বার্তা দিল, তাঁর পাশে এখনও একটা বড় কর্মীবাহিনী আছে। তাই প্রশ্ন—এই মিছিল কি শুধুই আনুগত্যের প্রকাশ? না কি এক নতুন লড়াইয়ের সূচনা?”
সরাসরি না বললেও মিছিলে যোগ দেওয়া কর্মীদের অনেকেই বলছেন, “এখনকার নেতারা একতরফা ভাবে সব চালাচ্ছেন। সুজয়দা মাঠে ফিরলে সাধারণ কর্মীরা সাহস পাবে।”
তাহলে কি ২৬-এর ভোটের আগে তিনি বড় ভূমিকা নিতে চলেছেন? নাকি শুধুই দলে নিজের জায়গা ফিরে পাওয়ার লড়াই? আপাতত জবাব মেলেনি। তবে জেলা রাজনীতিতে ‘সুজয় বনাম তৃণমূলের অন্দরের নেতৃত্ব’-এর এই দ্বন্দ্ব যে আরও স্পষ্ট হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।
Post Comment