বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, অযোধ্যা পাহাড় :
পালটে গেছে অযোধ্যা৷ পালটে গেছে সেন্দ্রা। আর এই পরিবেশ বান্ধব সেন্দ্রায় ম্যান অফ দ্য ম্যাচ বন দফতর। ম্যান অফ দ্য সিরিজ জেলা প্রশাসন। এমনটাই বলছেন এলাকার মানুষ।

সেই কোন প্রাচীন কাল থেকেই বুদ্ধ পূর্ণিমা তিথিতে জঙ্গলমহলের মানুষ মেতে উঠতেন বীর দিশম সেন্দ্রা পরবে। অরণ্য নির্ভর পুরুষ বীরত্ব প্রদর্শন করতে প্রবেশ করত জঙ্গলে। শিকার করে আনত একের পর এক বন্যপ্রাণ৷

অবস্থাটা এখন পালটে গেছে পুরোটাই। উৎসব রয়েছে পুরোদস্তুর। হয় না শিকার। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার করা মামলার প্রেক্ষিতে মহামান্য আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী উৎসবে বন্যপ্রাণ শিকার সম্পূর্ণ বন্ধ।

বন দফতরের লাগাতার সচেতনতার প্রচার এই কয়েক বছর ধরে সেন্দ্রাকে করে তুলেছে রক্তপাতহীন। এবছরও তার ব্যতিক্রম হলো না। সেন্দ্রা মানে অনুসন্ধান। নিজেকে খুঁজতেই যেন হাজার হাজার আদিবাসী পুরুষের পদস্পর্শ পেয়ে সেজে উঠল রূপসী বাংলার অযোধ্যা।

পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন,” আদিবাসী সমাজের প্রত্যেক সম্মানীয় নেতৃত্ব আমাদের জানিয়েছিলেন যে তাঁরা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। রক্তপাতহীন সেন্দ্রা আয়োজনে আমরাও দূরদূরান্ত থেকে আগত মানুষজনের পাশে ছিলাম। প্রশাসন তাঁদের সুবিধার সমস্তরকম বন্দোবস্ত করে দিয়েছে।”

একটা সময় ছিল যখন হরিণ থেকে শুরু করে সজারু শিকারিদের অস্ত্রে প্রাণ যেত কত শত বন্যপ্রাণীর। কিন্তু বদলে যাওয়া সেন্দ্রা বুঝেছে প্রকৃতি আর মানুষের সহাবস্থানের কথা৷ ফলে এবার শুধুই উৎসব।

তাহলে কেমন হলো বদলে যাওয়া সেন্দ্রা? আদিবাসী গড়ধামের পূজারী যামিনী সিং লায়া বলেন, “গড়ধামে অস্ত্র পূজা করে পবিত্র ভূমির মাটি নিয়ে গেলেন আদিবাসী পুরুষেরা৷

বাড়িতে তুলসি মঞ্চে সেই মাটি স্থাপন করা হয়। এক সময় বলা হতো যে আদিবাসী পুরুষ মায়ের গর্ভে আছে, সে ছাড়া আর সবাই আসে অযোধ্যার সেন্দ্রায়। দূরদূরান্ত থেকে এবছরও হাজার হাজার আদিবাসী পুরুষ এসেছিলেন পাহাড়ে।”

অহিংসার পূজারী গৌতম বুদ্ধর জন্মতিথিতে রক্তপাতহীন সেন্দ্রায় আক্ষরিক অর্থেই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ বন দফতর। যত রকম ভাবে সচেতনতার প্রচার করা যায়, তাঁরা করেছেন।

পাশাপাশি সেন্দ্রায় আগত আদিবাসী পুরুষদের সুবিধার্থে ছিল নানান বন্দোবস্ত। শিকার উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের বিশেষ পরিষেবা দিতে এগিয়ে আসে অযোধ্যা পাহাড় আদিবাসী উন্নয়ন কমিটির।

জলসত্র গড়ে ছোলা গুড় এবং জল বিতরণ করেন তাঁরা। পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং আপাতকালীন পরিষেবা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরও।

কোথা থেকে না এসেছেন আদিবাসীরা? সুদূর ঝাড়খণ্ডের মধুপুর থেকে আগত শংকর চন্দ্র মূর্মু, পূর্ব বর্ধমান থেকে আগত লাল টুডু, শুখদেব সিং সর্দার প্রমুখ পঞ্চমুখে বদলে যাওয়া সেন্দ্রা আর প্রশাসনের ব্যবস্থাপনার সুনাম করেছেন।

আর করবেন নাই বা কেন। এদিন পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে ছিল বনদফতর এবং পুলিশ প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা। ছিল নাকা তল্লাশির ব্যবস্থা। উপস্থিত ঝালদার মহকুমা শাসক গৌরব ঘোষ, বলরামপুরের সিআই তথা বাঘমুন্ডি থানার ইনচার্জ বাপ্পা মিত্র প্রমুখ।

বদলে যাওয়া সেন্দ্রা আর শিকার নয়, উৎসবে মাতলো। আর পিকনিকের মুডে উৎসব পালন করলেন হাজার হাজার আদিবাসী পুরুষ।










Post Comment