নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝালদা:
ঠিক কী হয়েছিল সেদিন পহেলগাঁওয়ে? কোন দিক থেকে কত জন জঙ্গি এসেছিল? তাদের সঙ্গে কী কী অস্ত্র ছিল? সমস্ত প্রশ্নের পুঙ্খানুপুঙ্খ জবাব এনআইএ-র কাছে তুলে ধরলেন নিহত আইবি অফিসার মনীশ রঞ্জন মিশ্রর স্ত্রী জয়া দেবী। তাঁদের পুরুলিয়ার ঝালদার বাড়িতে মঙ্গলবার বিকেলে পদার্পণ করেন ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সির আধিকারিকরা।
গত ২২ এপ্রিল দুপুরে কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁও-এর বৈসরনে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হানার বিবরণ শহিদ আইবি অফিসার মনীশ বাবুর স্ত্রীর কাছ থেকে শোনে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
প্রায় ১০- ১২ মিনিট ধরে জয়া দেবী সেদিনকার ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। তাঁর বয়ান রেকর্ড করে এনআইএ। নিহত আইবি অফিসারের ১২ বছরের ছেলের কাছ থেকেও ওই ঘটনার বিবরণ নেন তাঁরা। এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে এনআইএ-র আধিকারিকরা কোন কথাই বলতে চাননি।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, গত সোমবার ঝালদায় প্রয়াত
মনীশরঞ্জন বাবুর বাড়িতে আসার কথা ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। কিন্তু মনীশ বাবুর স্ত্রী জয়া দেবী অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেদিন আসেননি তাঁরা। মঙ্গলবার ঝালদায় মনীশ বাবুর বাড়িতে এসে এন আই এ-র তিন প্রতিনিধি প্রথমে প্রয়াত আইবি অফিসারের ১২ বছরের ছেলে সায়নের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের গলার স্বর থেকে জাঁদরেল গোয়েন্দাদের কড়া স্বর উধাও হয়ে গিয়েছিল। স্নেহ আর আদর ঝরে পড়ছিল কথাবার্তায়। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল ১২ বছরের সায়ন যেন কোন ভাবেই বুঝতে না পারে, এটা জেরা চলছে।

জঙ্গিরা কজন ছিল?
কোন পথ দিয়ে আসে?
সেই সময় সায়ন কী করছিল? তার বোন কোথায় ছিল?
তার মা কী করছিল?
তার বাবা কোন দিকে ছিল?
এত পূঙ্খানুপুঙ্খ প্রশ্নের উত্তর সায়ন ঠিকভাবেই দিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাকে সায়ন জানিয়েছে, সে বোনের সঙ্গে গাছের নিচে খেলা করছিল তখন। তার মা মোবাইলে ব্যস্ত ছিল। তার বাবা ছিল গাছের উল্টোদিকে।
এদিকে হামলায় জড়িত জঙ্গিদের একটি স্কেচ তৈরি করেছে
এনআইএ। স্কেচ দেখে কিশোর সায়ন বলে, রঙিন ছবি হলে তার পক্ষে চেনা সহজ হতো। জঙ্গিদের মুখ যে অনেকটা স্কেচের মতই ছিল সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে সে।
সায়নের সঙ্গে কথা বলার পরেই ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তার মায়ের সাথে কথা বলতে চান। পরিবার আপত্তি তুলে বলে জয়া দেবী অসুস্থ। এন আই এ-র আধিকারিকরা বলেন, কথা বলতেই হবে। তবে এমন ভাবে তাঁরা কথা বলবেন যাতে জয়া দেবীর খারাপ না লাগে।
সায়নকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় সঙ্গে ছিলেন তার কাকু রাহুলরঞ্জন। অন্যদিকে জয়া দেবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তাঁর শ্বশুর মঙ্গলেশ মিশ্র উপস্থিত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জয়া দেবী বলেন, জঙ্গি হামলার বিপদ বুঝেই তাঁর স্বামী ১০ থেকে ১২ জন পর্যটককে সেফ প্লেসে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু জঙ্গিরা তা দেখতে পেয়ে তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়। তাঁর আক্ষেপ, বিপদ বুঝে তিনি যদি আগেই সতর্ক হতেন, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল প্রায় দু’ঘণ্টা ছিল তাঁদের বাড়িতে। শহিদ আইবি অফিসারের বাবা মঙ্গলেশ মিশ্র বলেন, “আমি এই ঘটনার বিচার চাই। সেই বিচার দেখবো বলেই আমি বেঁচে আছি। কোন রকম দেরি না করে অবিলম্বে জঙ্গি দমন শুরু হোক।”
পরিবারের তরফে নিহত আইবি অফিসারের ভাই রাহুলরঞ্জন বলেন, “প্রথমে আমার ভাইপো তারপর বৌদিকে ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দল জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে ভাইপোর বয়ান রেকর্ড করেনি। বৌদির বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।”
Post Comment