নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝালদা :
আইবি অফিসার মনীশকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে তাঁর বারো বছরের ছেলে সমৃদ্ধকেও টার্গেট করেছিল জঙ্গিরা। চোখের সামনে স্বামীকে রক্তাপ্লুত হয়ে লুটিয়ে পড়তে দেখে প্রথমে আর্তনাদই করে উঠেছিলেন স্ত্রী জয়া। সেই আর্তনাদেই তাদের দিকে ফেরে জঙ্গিরা। কিন্তু চরম আতঙ্কের মধ্যেও অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে পুত্র ও কন্যাকে বাঁচালেন জয়া।
কীভাবে? জানালেন ঝালদার বাসিন্দা মৃত আই বি অফিসারের পিসির মেয়ে নেহা৷ বৌদি জয়ার ছেঁড়া ছেঁড়া কথা থেকে তাই জানতে পেরেছেন তিনি।
◾মঙ্গলবার বিকেল। পহেলগাঁওয়ের ঢালু উপত্যকায় নিজের মতো করে সময় কাটাচ্ছিলেন পর্যটকরা। আর সেই সময় হামলা।
◾পর্যটকদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল, কাশ্মিরি হো? হিন্দু হো? আর বেছে বেছে হিন্দুদের গুলি করে মারা হচ্ছিল।
◾যাঁদের হাতে হিন্দু ধর্মের পবিত্র লাল সুতো দেখতে পেয়েছিল জঙ্গিরা, তাঁদের কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। গুলি করছিল সটান।
◾দাদা ট্যুরিস্টদের বাঁচাতে গিয়েছিল। আর তখনই জঙ্গিদের টার্গেট হয়ে যায়। ওকে বউ, ছেলে, মেয়ের সামনেই গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। বউদি আর্তনাদ করে উঠতেই ওদের দেখতে পায় জঙ্গিরা। দাদার ছেলে সমৃদ্ধকেও টার্গেট করেছিল ওরা। সামনে ফেরিওয়ালারা চলে আসায় দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। আর তখনই ঢালু জমিতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে বউদি গড়িয়ে পড়ে৷ ওদের আরও নিচের দিকে গড়িয়ে দেয়৷ অনেকক্ষণ জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে।
◾চোখের সামনে স্বামীকে এভাবে মরতে দেখে আর সন্তানদের নিয়ে এতটা রাস্তা আতঙ্কে পালিয়ে আর নার্ভের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি জয়া দেবী। জঙ্গল থেকে তাঁদের উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। অসুস্থ হয়ে পড়া জয়া দেবীকে ওই দিনই পহেলগাঁও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার আগেই অবশ্য কোনরকমে ফোনে দেওর বিনিতকে জয়া জানান, “হাবিকো জঙ্গি লোগো নে গোলি মার দিয়া।”
◾ছেলে মেয়ে ও নিজেকে বাঁচিয়ে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার ঝালদায় নিজের বাড়িতে ফিরে তো এসেছেন জয়া । কিন্তু চোখের সামনে স্বামীর মৃত্যু তাঁকে প্রচন্ড আঘাত দিয়েছে। ঘন ঘন চৈতন্য হারিয়ে ফেলছেন তিনি। একই অবস্থা ১২ বছরের বালক থেকে ওই ৬ বছরের মেয়ের। কাঁদতে কাঁদতে শ্মশানে বাবার মুখাগ্নি করতে পারেনি সমৃদ্ধ। তার কাকা বিনিত-ই দাদার মুখে আগুন দেন।রীতি অনুযায়ী এদিনই মস্তক মুণ্ডন করেন তিনি। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের গার্ড অফ অনারের সময় মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানান দাদাকে।
◾নেহার সাফ কথা, “আমরা বদলা চাই।”
Post Comment