নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
যিনি বিজ্ঞানের শিক্ষক, কষ্ট করে অঙ্ক করিয়ে দেবেন। বাংলার শিক্ষক চেষ্টা করলে ইতিহাস পড়িয়ে দিতে পারবেন, কিন্তু দেবভাষা সংস্কৃত? সবাই পড়াতে পারবেন না। আর যদি একমাত্র সংস্কৃত শিক্ষক সুপ্রিম কোর্টের রায়ে খোয়ান তাঁর চাকরি? কে পড়াবেন সংস্কৃত? চরম সংকট পুরুলিয়ার সিন্দরি চাষ রোড হাইস্কুল (উচ্চ মাধ্যমিক )-এ।
এসএসসিতে এই স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য নিযুক্ত সংস্কৃতের শিক্ষক অভিষেক মাহাতোর
চাকরি গেছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কিরণময় পাত্র বলেন, “আমাদের স্কুলে সংস্কৃতের এক মাত্র শিক্ষক তিনিই। সপ্তম-অষ্টমের পাশাপাশি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াতেন তিনি। এরপর কী হবে জানি না!”
চিন্তিত শিক্ষায়তনের পড়ুয়ারাও। বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়ার সংখ্যা ১৪৬। অষ্টম শ্রেণীতে রয়েছে ১৮১। একাদশ থেকে
দ্বাদশে উঠেছে ১০০ জন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর পড়ুয়াদের অনেকেই ফোন করছে শিক্ষককে। ” ওদের কী বলবো আমি? কিছু বলার নেই। ” বলছেন পুরুলিয়ার কাশীপুরের বয়করা গ্রামের বাসিন্দা ওই শিক্ষক অভিষেক মাহাত। দেড় বছর বিয়ে করেছেন। জন্ম নিয়েছে কন্যা সন্তান। দিন কয়েক আগে ব্যাংক থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যক্তিগত ঋণ নেন। ইএমআই দিতে হচ্ছে মাসে ৬২২৩ টাকা। প্রতিমাসে ৮ তারিখ সেই টাকা এরপর কীভাবে জোগাড় হবে? প্রশ্নে প্রশ্নে তিনি অসহায়।
শিক্ষকতার চাকরি জীবন অভিষেক বাবু শুরু করেছেন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। বীরভূমের কীর্ণাহারে
জুবুতিয়া জপেশ্বর বিদ্যামন্দির (উচ্চ মাধ্যমিক) বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সূত্রপাত। ২০২১ সালে মিউচুয়াল ট্রান্সফার। আর তারপর সিন্দরি চাষ রোড হাইস্কুল (উচ্চ মাধ্যমিক )-এ। আপার প্রাইমারিতে ডাক পেয়েছিলেন। কম বেতনের চাকরিতে ইন্টারভিউ কেনই বা দিতেন? তখন কী আর জানতেন এই অবস্থা হবে? ফলে আফসোসের শেষ নেই। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পুরুলিয়া শহরের জে কে কলেজের ‘গেস্ট টিচার’ ছিলেন। এখন সেখানের পদ নেই৷ অগত্যা অকূল পাথারে অভিষেক।
Post Comment