বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, পুরুলিয়া :
দোষ তাঁর একটাই। তিনি পুরুষ। আর সেই দোষেই চাকরি গেল শিক্ষকের। এই একুশ শতকের নারীরা যেখানে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পায়ে পা মিলিয়ে চলছে, সেখানে দাঁড়িয়ে সরকারি নিয়মে শুধুমাত্র পুরুষ হওয়ার কারণে চাকরি খোয়ালেন এক অস্থায়ী শিক্ষক। ঘটনা ঘটেছে পুরুলিয়ার লক্ষ্মণপুর যোগদা সৎসঙ্গ কন্যা বিদ্যালয়ে। চাকরি খোওয়ানো শিক্ষকের নাম সমীর কুমার দেওঘরিয়া। তাঁর বাড়ি পাড়া থানার চৌতালা গ্রামে। সোমবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানান চাকরিহারা শিক্ষক। তাঁর অভিযোগ , তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ ১৮ বছর পর তার চাকুরি চলে গিয়েছে। কারণ একটাই, তিনি পুরুষ! লক্ষণপুর যোগদা সৎসঙ্গ কন্যা বিদ্যালয় হল একটি বালিকা বিদ্যালয়। সেখানে পুরুষ শিক্ষক হওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হঠাৎ এতদিন পর বিদ্যালয়ে আসতে বারণ করেন তাঁকে। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, গার্লস স্কুলে কোন ‘মেল টিচার’ রাখা যাবে না। আর তারপরেই ওই স্কুলের দর্শন বিভাগের আংশিক সময়ের শিক্ষক ১৮ বছর পর হঠাৎ চাকরি হারিয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েন। তাই সোমবার লিখিত অভিযোগ জানিয়ে জেলা শিক্ষা আধিকারিকের দ্বারস্থ হন তিনি।

শিক্ষক বলেন, ” গার্লস স্কুলে পুরুষ শিক্ষক না রাখার নিয়মের বিষয়টি বিদ্যালয়ের স্টাফ কাউন্সিলকে জানিয়েছি। কিন্তু তাঁরা তেমন কোন নিয়ম রয়েছে বলে জানেন না। বিদ্যালয়ের সমস্ত কর্মী চান আমি স্কুলে থাকি। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা কোনমতেই কারো কথা শুনছেন না। আমার বয়স ৫০ বছর। স্ত্রী শারীরিক দিক থেকে অসুস্থ। আমার মেয়ে কলেজে ইংরাজি অনার্স পড়ছে। ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে সায়েন্স নিয়ে পড়তে চায়। কাজটা চলে গেলে আমার সংসারটা সম্পূর্ণ অন্ধকারে ভেসে যাবে। এই বয়সে আমাকে যদি স্কুল থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে আমি ও আমার পরিবার আর্থিক দিক থেকে খুব অসুবিধায় পড়বো।”
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শুভ্রা মাহান্তি জানান, ” আমাদের স্কুল একটি সোসাইটির পরিচালনায় চলে। ওই সোসাইটি আগেই জানিয়েছিল মেয়েদের স্কুলে কোন পুরুষ শিক্ষককে রাখা যাবে না। সেই মোতাবেক আমি ওই শিক্ষককে জানিয়ে দিয়েছি।”
সরকারি নিয়ম ব্যক্ত করেছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক মহুয়া বসাক। নিয়ম অনুযায়ী বালিকা বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র শিক্ষিকারাই পড়াতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অশিক্ষক কর্মচারী পুরুষ হতে পারে তবে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে পুরুষদের নিয়োগ করা হয় না বালিকা বিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, “এই ধরনের পার্ট টাইম টিচারের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে স্কুলের এক্তিয়ারভুক্ত। ফলে আমাদের কিছু করার নেই।”
দীর্ঘ ১৮-টা বছর যে স্কুলের ছাত্রীদের দর্শন শাস্ত্রের পাঠ দিয়েছিলেন আজ সেই স্কুল থেকেই তাঁকে বহিষ্কার করা হলো। এতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন সমীর বাবু। সুবিচারের আশায় রয়েছেন তিনি।











Post Comment