বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, বলরামপুর
দেশের সেবা করে ২৪ বছর পর অবসর নিয়ে বাড়ি ফিরলেন আর্মি জুনিয়র কমিশন অফিসার। খুশির জোয়ার বলরামপুরে!
নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশবাসীদের জন্য পরিষেবা দিয়ে থাকেন তাঁরা। উৎসবের দিনে যখন সকলে আনন্দে মেতে ওঠেন তখন তাঁরা বর্ডারে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ২৪ বছর দেশের সেবায় নিযুক্ত থাকার পর অবসর নিয়ে বাড়ি ফিরলেন সেনা কর্মী তথা বলরামপুর মসজিদ পাড়ার বাসিন্দা রিয়াজ আনসারী। তাঁর গ্রামে ফেরার আনন্দে আপ্লুত সমগ্র বলরামপুরবাসী। বুধবার তাঁকে স্বাগত জানাতে আয়োজিত হল বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। ট্রেন থেকে নামতেই তাঁকে মালা পরিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর বলরামপুর ওয়ারিয়র ক্লাবের তরফ থেকে মালা পরিয়ে ভারতের জাতীয় পতাকা দিয়ে সুসজ্জিত গাড়িতে করে বলরামপুর বাজার পরিক্রমা করানো হয়। অনেকেই তাঁর গাড়ির কাছে এসে তাঁর সাথে করমর্দন করেন।

২০০১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ২০০১ সালের শেষের দিকে দিল্লির সংসদ ভবনে জঙ্গি হামলায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই শামিল হন। ২০০২ থেকে ২০০৩ প্যারেন্ট রেজিমেন্ট ইন্ডিয়ান আর্মি আর্টিলারি সেন্টার নাসিকের ময়দানি তোপখানায় কর্মরত ছিলেন। ২০০৩ সালে নিযুক্ত ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, লাইন অফ কন্ট্রোলের মত এলাকায় । তারপর ভারতীয় সেনার অন্যতম কমান্ডো বাহিনী, রাষ্ট্রীয় রাইফেলে যোগদান করেন। একবার নয়, তাঁর কর্মজীবনে দু-দুবার কমান্ডো বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন তিনি। কমান্ডো বাহিনীতে থাকাকালীনও জম্মু-কাশ্মীরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাউন্টার ইনসারজেন্সি অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। পৃথিবীর উচ্চতম রণক্ষেত্র সিয়াচেন গ্লেসিয়ারে অপারেশন মেঘদূত থেকে রাজস্থানের মত উষ্ণ রণক্ষেত্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশগ্রহণের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে একাধিক মেডেল দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে তাকে।

তোপখানা নাসিক রোড ক্যাম্প ইন্সট্রাক্টর পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। বাড়ি ফিরে খুবই খুশি রিয়াজ বাবু। তিনি বলরামপুর ডাকবাংলা ওয়ারিয়র ক্লাবের মেন্টর। তাঁর হাতে ফিজিক্যাল ট্রেনিং নিয়ে বলরামপুরের অনেকেই বর্তমানে চাকরি করছেন। তিনি বলেন, “আমার স্বপ্ন আগামী দিনে সেনাবাহিনী তে যোগদান করতে আগ্রহী যুবক-যুবতী দের প্রশিক্ষণ দেওয়া। আগামী দিনে যারা দেশ সেবার কাজে নিজেদের নিযুক্ত করতে চায়, তাদের পাশে থাকব, এ স্বপ্নই রয়েছে।”

রিয়াজ আনসারী অবসর গ্রহণ করে বলরামপুর ফিরে আসায় আনন্দে আপ্লুত এলাকার মানুষজন। বাসিন্দা বিজয় কুমার সাউ বলেন, ”আগামী দিনে তিনি নবপ্রজন্মের কাছে আদর্শ হয়ে উঠবেন। ”
প্রতিবেশী গুলাবসা খাতুন থেকে প্রাক্তন সেনানির ভাইঝি রেশমি খাতুন জানিয়েছেন, “দেশের সেবা করে সুস্থ ভাবে তিনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। তাঁকে ঘিরেই আমাদের গর্ব। অধীর আগ্রহে এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম আমরা।”







Post Comment