বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, নিমডি(ঝাড়খণ্ড) :
পদ্মশ্রী প্রাপ্ত ছৌ নাচের প্রবাদ প্রতিম শিল্পী গম্ভীর সিং মুড়া ফিরছিলেন সাধারণ স্লিপার ক্লাসে। ফেরা হয়নি তাঁর। ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর হাওড়া চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আর এখনকার ছৌ শিল্পীদের মাসিক আয় কর্পোরেট চাকুরেদেরও চমকে দেবে। কোন কোন শিল্পীর মাসিক আয় ৭০ হাজার! ছৌ নাচের পুনরুজ্জীবন ঘটার ফলেই এমন বিপুল আয়। একসময় ছৌ শিল্পকলা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গেলেও নিজের আঁতুড়ঘরেই
ধুঁকছিলো ছৌ নাচ। সেই ছৌ নাচ মানভূম বা পুরুলিয়া নয়, পুরুলিয়া ছুঁয়ে থাকা ঝাড়খণ্ডেও সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বাংলার লোকশিল্প নিয়ে কর্মরত একটি সংস্থা ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোগে শুক্র, শনি, রবিবার তিন দিন ধরে ঝাড়খন্ডের নিমডিতে ছৌ নাচের উৎসবে উঠে এলো বিষয়টি। লোকসংস্কৃতি গবেষক সুভাষ রায় বলেন, ” আজ নয়, বহুদিন আগেই ছৌ নাচ বিদেশে গিয়েছে। তবু এই শিল্পকলা কেমন যেন ধুঁকছিলো। কয়েক বছর ধরে উল্টো ছবিটাই দেখছি। এ হলো
ছৌ নাচের পুনরুজ্জীবন।”

বাস্তবিক ছৌ নাচের বাজার এখন বেশ ভালো। এই বাজার একদিনে তৈরি হয়নি। বাংলার লোকশিল্প নিয়ে কর্মরত ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অধিকর্তা অমিতাভ ভট্টাচার্য বলেন, ” নানান কারণে ছৌ নাচের বদল ঘটেছে। ফলে নাচের বাজার বেড়েছে। বেড়েছে রোজগার।”
কী কী কারণে পালটে গিয়েছে ছৌ নাচ? বেড়েছে শিল্পীদের দক্ষতা। নতুনত্ব ভরা পালা আসছে। এখন আর শুধু পৌরাণিক অসুর কেন্দ্রিক পালা নয়, ছৌ নাচে এখন ম্যাকবেথ, কালমৃগয়ার মতো পালাও হচ্ছে। এখন ছৌ আর কেবল গ্রামীণ এলাকার বিনোদন নয়, শহরাঞ্চলেও আগ্রহ বাড়ছে। সেখানেও ছৌ নাচের অনুষ্ঠানে প্রেক্ষাগৃহ ভরে যাচ্ছে।

আগে পুরুলিয়া শহরে অর্থাৎ ২০০৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত শহর পুরুলিয়ায় এই নৃত্যকলার ওপর কর্মশালা হলে ১০-১২ টার বেশি ছৌ নাচের দলকে পাওয়া যেত না। দর্শক বলতে ২৫-৩০ জন থাকতো। আর এখন পুরুলিয়ায় বীররসের ছৌ নাচের দলের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১৫০ দল সারা বছরে কম করে ১৫০ করে অনুষ্ঠান পায়।

ফলে এই দলগুলির শিল্পীদের মাসিক আয় ১০ হাজার থেকে ৭০ হাজার পর্যন্ত। এই শিল্পকলা নিয়ে কাজ করা ওই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা অধিকর্তা অমিতাভ ভট্টাচার্যের কথায়, “২০১০ সালে ইউনেস্কো এই শিল্পকলাকে স্বীকৃতি দিলেও এই নাচ কিন্তু পুরুলিয়ার গর্ব হয়ে ওঠেনি। ২০১৫ থেকে এই নাচ পুরুলিয়ার গর্ব হয়ে উঠেছে। বেড়েছে বাজার।”
Post Comment