নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
আচ্ছা, শ্বেত পলাশ নিয়ে যে এত মাতামাতি, কেন জানেন? প্রথমত শ্বেত পলাশ বিরল গাছ। বর্তমানে
জঙ্গলমহল পুরুলিয়া ছাড়া আর কোথাও শ্বেত পলাশের সন্ধান মেলে না। অন্যদিকে শ্বেত পলাশের গাছের রসে রয়েছে বেশ কিছু ওষধি গুণ। আছে উপক্ষার, গ্যালিক ও ট্যানিক অ্যাসিড। এতে নিরাময় হয় বেশকিছু দূরারোগ্য ব্যাধি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ভেষজগুণ নারীদের বন্ধ্যত্ব দূর করে। প্রস্তুত করা যেতে পারে পুরুষের যৌনবর্ধক দাওয়াই।
শ্বেত পলাশের এই বিরলগুণ কি রয়েছে লাল বা হলুদ পলাশের মধ্যে? এই নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়। ‘র্যাট মডেল’ নিয়ে চলছে গবেষণা!
গবেষণার পন্থাও স্থির হয়েছে।অঙ্গজ জননের মাধ্যমে ও বীজ সংরক্ষণ করে এই তিন পলাশের চারা গাছ তৈরি করছে বিশ্ববিদ্যালয়। একই কাজ করছে পুরুলিয়া বনবিভাগও। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ এবং প্রাণিবিভাগের সমন্বয় সাধনে এই গবেষণা চলছে।
সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড.সুব্রত রাহা বলেন, “কবিরাজদের কাছ থেকে জেনেছি এই শ্বেত পলাশ গাছের রস বন্ধ্যত্ব নিরাময়ে কাজে লাগে।
বৈজ্ঞানিক কোন প্রমাণ নেই। সেই প্রমাণ খোঁজার চেষ্টা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। শ্বেত পলাশের ওষধি গুণাবলি কী কী? আর সেই গুণাবলি কি রয়েছে লাল, হলুদ পলাশে? সেই নিয়ে গবেষণা চলছে।” গবেষণালব্ধ বিষয় প্রয়োজনে কোনও জীব কোষে প্রয়োগ করা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক ড. শংকর ভট্টাচার্য বলেন, ” বিভিন্ন জনজাতির মানুষজন তাদের বিভিন্ন অসুখের চিকিৎসায় শ্বেত পলাশ ব্যবহার করেন। এই বিষয়গুলি জানতেই গবেষণা থেকে উঠে আসা বিষয়গুলি জীব কোষে প্রয়োগের মাধ্যমে হাতেকলমে আমরা দেখব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার সৌরভ গড়াই ও পূর্ণিমা পরামানিক বলেন, “শ্বেত পলাশের চারা গাছ তৈরি করছি আমরা। চলছে সাদা, হলুদ ও লাল পলাশের ফুল, পাতা, গাছের ছাল নিয়ে গবেষণার কাজ ।”
পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও
অঞ্জন গুহ-র কথায়, “পর্যটকদের কাছে একটাই আবেদন আপনারা পলাশ ফুল বা ডাল ছিঁড়বেন না। আমাদের নার্সারিতে লাল, হলুদ ও শ্বেত পলাশের চারা তৈরি করে বিতরণ করার কথা ভাবছি।” পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই বসন্তে পুরুলিয়া সেজে ওঠে প্রকৃতির পলাশে। পলাশ দেখতে বহু পর্যটক এই জেলায় আসেন। পলাশকে ঘিরেই এ জেলার পর্যটন ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ আকার নিয়েছে। তাই পলাশ সংরক্ষণে আমাদের বিভিন্নভাবে প্রচার চলছে।”
কীভাবে হচ্ছে পলাশের সংক্ষরণ? পুরুলিয়া জুড়ে প্রায় ১০ লক্ষ পলাশ গাছ পাহারায় রয়েছে পুলিশ ও বন দফতর। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ পলাশের ঘন জঙ্গলে গড়েছে কিয়স্ক। লাগানো হয়েছে ব্যানার। সচেতনতার প্রচার করে
‘পলাশ প্রহরী’ হয়ে উঠেছে তারা। পলাশ পর্যটনে নজরদারি চালাচ্ছে বনদপ্তরও। যাতে কেউ পলাশের একটা ফুলও না ছেঁড়ে, ভাঙতে না পারে ডাল, সে বিষয়ে প্রচার চলছে।
Post Comment