দেবীলাল মাহাত ও বিশ্বজিৎ সিং সর্দার :
পিদাঁড়ে পলাশের বন দেখে কবি সুনীল মাহাতোর সঙ্গে মন পালাবো পালাবো হয় অনেকেরই। আগুন রাঙা পলাশ পর্যটনে প্রহরায় সতর্ক পুলিশ। স্পষ্ট সতর্কবার্তায় সাবধান বাণী দিয়ে পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে পলাশ পর্যটন ঘিরে।
কনকনে শীত পার করে বসন্ত এসে গেছে। “পলাশেরও নেশা মাখি চলেছি দুজনে/
বাসনার রঙে মিশি শ্যামলে স্বপনে/
কুহু কুহু শোনা যায়,/
কোকিলের কুহু তান/…”

বসন্ত মানেই আগুনরঙা লাল পলাশ। সাথেসাথে বিরল প্রজাতির শ্বেত, হলুদ , বনলতা পলাশ। যেন ফুলের সমারোহ। প্রকৃতি যেন তার ভাণ্ডার উজাড় করে দিয়েছে রুখাশুখা পুরুলিয়ার পাহাড়, জঙ্গলকে। বসন্তের এই প্রকৃতির রূপ বদলের সাক্ষী হতে, পলাশের সৌন্দর্য দেখার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকেরা ছুটে আসেন পুরুলিয়ায়।বর্তমানে ইন্টারনেট, অ্যান্ড্রয়েড, স্যোশাল সাইটের দাপটে রং বেরঙের দুষ্প্রাপ্য পলাশ ফুলের ছবি ছড়িয়ে পড়ায় শাল পলাশের জেলা পুরুলিয়া যেন পর্যটকদের কাছে বেড়ানোর আরও আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠেছে। বেড়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। পোষাকি নাম পলাশ পর্যটন। এই নয়া তাগিদ দোলযাত্রায় এনেছে এক অনন্য মাত্রা । পলাশের সৌন্দর্য বাঁচাতে এগিয়ে এলো পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। সচেতনতার বার্তা দিয়ে পাহাড়, জঙ্গল , পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র সহ বিভিন্ন জায়গায় জেলা পুলিশের উদ্যোগে লাগানো হল সচেতনতার ব্যানার। পুলিশের এই উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে স্থানীয় মানুষ সহ প্রকৃতিপ্রেমীদের।
ব্যানারে লেখা হয়েছে, “রূপসী পুরুলিয়া আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। পলাশ ফুল ছিঁড়বেন না। পলাশের সৌন্দর্য উপভোগ করুন। জঙ্গলে আগুন জ্বালাবেন না। ” নিচে লেখা পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।

বেশ কয়েকবছর ধরে বনদপ্তর পলাশ গাছকে সংরক্ষণের তালিকায় নিয়ে এসেছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে পলাশ গাছ কাটা, পলাশ ফুল তোলা। ফলে পলাশ গাছের সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। গাছের নিচে পড়ে থাকা পলাশ ফুল থেকে স্থানীয় স্বনির্ভর মহিলা দল তৈরি করছে ভেষজ আবির। তাতে ফুলের রূপ দর্শনের পাশাপাশি পর্যটকদের ভেষজ আবির কেনার সাধও মিটছে। সেই আবির বিক্রি করে আয়ের মুখ দেখছেন জেলার স্বনির্ভর দলের মহিলারাও। বনদপ্তরের পর জেলা পুলিশের এই সচেতনতার উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে প্রকৃতি প্রেমিকদের। সকলের আবেদন – পলাশ ফুল ছিঁড়বেন না, তার সৌন্দর্য উপভোগ করুন। আপনিও প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষার শরিক হোন।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দোলের পূর্বে, বর্তমান মরশুমে পুরুলিয়া সেজে ওঠে প্রকৃতির পলাশ দিয়ে। পলাশ দেখার জন্য পুরুলিয়া জেলায় আসেন বিভিন্ন জায়গার পর্যটকেরা। এই পলাশ পুরুলিয়ার জন্য গর্বের বিষয়, তাই পুরুলিয়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি, পলাশ সংরক্ষণ করার জন্য। পুরুলিয়ার যে সমস্ত জায়গাগুলিতে পলাশের আধিক্য রয়েছে সেই সমস্ত জায়গাগুলিতে পুলিশের কিয়স্ক তৈরি করা হয়েছে। ওই কিয়স্কগুলিতে দোলের সময় সিভিক ভলেন্টিয়ার বা পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকবে। তারা পর্যটকদের জন্য গাইড হিসেবে কাজ করবেন।
যাতে কেউ ভুল করে পলাশের ফুল না তোলেন সেই বিষয়েও সতর্ক করবেন।”
অন্যদিকে পলাশ দেখতে গিয়ে পলাশ গাছের ডাল না ভাঙার বার্তাও দিয়েছেন তিনি।
Post Comment