insta logo
Loading ...
×

ভেষজ আবির আর ফ্লোরাল গ্রিটিংস,প্রকৃতি পাঠের নয়া নিশানা দোলের ঠিকানায়

ভেষজ আবির আর ফ্লোরাল গ্রিটিংস,প্রকৃতি পাঠের নয়া নিশানা দোলের ঠিকানায়

বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, আড়শা :

রঙ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মত যাই থাক, মনে যখন ফাগুন দেয় দোলা, তখনই আগুনে হিল্লোল ওঠে প্রাণে। ‘রঙ যেন মোর মর্মে লাগে’ কবিগুরুর এই আকুলতা যেন ফুটে উঠল পড়ুয়াদের কর্মে। মর্মে লাগানোর জন্যই যেন তারা নিজেদের হাতে হাতে তৈরি করছে ভেষজ আবির। ফিকে কমলা রঙ চাই? পলাশ ফুল দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেই আবিরের রং। আর কমলা রঙ প্রস্তুত হচ্ছে সিন্দুরি গাছের পাতা ব্যবহার করে। কাঁচা হলুদ দিয়ে একেবারে হলুদ রঙ। সিম, পেঁপে পাতা সঙ্গে নিম দিয়ে সবুজ।

কোনরকম রাসায়নিক ব্যবহার না করে ভেষজ আবির প্রস্তুত করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে পুরুলিয়ার আড়শার
নিউ ইন্টিগ্রেটেড গভর্নমেন্ট স্কুলের পড়ুয়ারা। আর শুধু তাই বা কেন? স্মার্ট ফোনের এই রমরমার যুগে ব্রাত্য হয়ে পড়া নব্বই দশকের ট্রেন্ডিং গ্রিটিংস কার্ডকে এবারের দোল-হোলিতে ফিরিয়ে আনছে তারা। দোল-হোলির শুভেচ্ছাতেও


পরিবেশবান্ধব গ্রিটিংস কার্ড প্রস্তুত হচ্ছে আড়শার সরকারি স্কুলে। নিজেদেরই আঁকা আর লেখা। তাই দিয়ে স্মৃতিমেদুর শুভেচ্ছা জ্ঞাপক কার্ড। ফুল, দলমন্ডল, পাতা দিয়ে ফ্লোরাল গ্রিটিংস কার্ড। তৈরি করছে আড়শার ওই সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা।তত্ত্বাবধানে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো- বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ।

অন্যদিকে যে ভেষজ আবির তারা তৈরি করছে, তার জন্য কিন্তু কোন ফুল গাছ থেকে ছেঁড়া হচ্ছে না। গাছের নিচে পড়ে থাকা ফুল দিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব ভেষজ আবির। প্রত্যন্ত আড়শার এই স্কুলের পড়ুয়াদের তৈরি হস্তশিল্পর মার্কেটিং করবে সিধো-কানহো-বিরসা
বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা এই সরকারি স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই পর্যটক সহ জেলার মানুষজন হাতে হাতে পাবেন একেবারে রাসায়নিক ছাড়া ভেষজ আবির। এই উপলক্ষ্যে বুধবার স্কুলে আয়োজিত কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়া সিধো কানহু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর পবিত্রকুমার চক্রবর্তী, পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সুদীপ পাল, জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক মহুয়া বসাক প্রমুখ। উপাচার্য বলেন, ” ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বলেছিলেন সারাদিনে এমন কোন কাজ করবে না যাতে মানুষের ক্ষতি হয়। এই ভেষজ আবির তো তেমনই। দোল-হোলির রঙ খেলায় যাতে মানুষের ক্ষতি না হয়।”

এবছরই প্রথম নয়, গতবছরও এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ভেষজ আবির তৈরি করে নজর কেড়েছিল। এবার সংযোজন পরিবেশবান্ধব গ্রিটিংস কার্ড। পুরুলিয়া সিধো কানহু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান সুব্রত রাহা বলেন, “এবার ফ্লোরাল গ্রিটিংস এই স্কুলের ক্ষেত্রে নতুন। কর্মশালার মধ্য দিয়ে
আমরা পড়ুয়াদের স্বনির্ভরতার পাঠ দিলাম। হস্তশিল্পেরও প্রসার হলো। “

আড়শার নিউ ইন্টিগ্রেটেড গভর্নমেন্ট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রিনা মুখোপাধ্যায় বলেন, “একদিকে ভেষজ আবির আর সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব গ্রিটিংস কার্ড।
পরিবেশ প্রকৃতির সঙ্গে মিশেই আমরা দোল-হোলি খেলবো।”

হাতের কাজের এমন প্রশংসা পেয়ে বেজায় খুশি আড়শার নিউ ইন্টিগ্রেটেড গভর্নমেন্ট স্কুলের দশম শ্রেণীর পড়ুয়া শ্রেয়া মিত্র, জয়দীপ মণ্ডল। তারা বলছে, ” গ্রিটিংস কার্ড বানানোর কাজ শিখতে পেরে খুব-ই ভালো লাগছে।”

একদিকে বাড়ছে পড়ুয়াদের সৃজনশীলতা, তারা নিচ্ছে স্বনির্ভরতার পাঠ, অন্যদিকে হচ্ছে হস্তশিল্পের প্রসার। এ যেন টোটাল প্যাকেজ৷ আগামী দোল-হোলির
রঙ খেলা হোক ভেষজ আবির দিয়ে। যে রঙ রবি ঠাকুরের ভাষায় ‘মর্মে লাগে’।

Post Comment