সুজয় দত্ত ও বিশ্বজিৎ সিং সর্দার :
অবশেষে ধরা পড়ল জিনাতের আশিক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। না বাস্তবে নয়। বন দফতরের পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ল তার ছবি। একের পর এক গ্রামবাসীকে দর্শন দিলেও এই প্রথম বন দফতরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ল প্রেমিক প্রবরের ছবি। ঝাড়খণ্ড পারেনি। পারল বাংলা। ১৭ দিন পর বাংলায় এসে ৭ দিনের মাথায় ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দিলো বাঘিনী জিনাতের আশিক। বান্দোয়ানের ভাঁড়ারির জঙ্গলে শনিবার ভোর ৩ টে ২৪ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তার ছবি। ১৮ দিনের মাথায় এই প্রথম তার ছবি হাতে পেল রাজ্যের বনবিভাগ। যাকে বড়সড় সাফল্য হিসাবেই দেখছেন বন কর্তারা। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত জিনাতের আশিক তিনবার দর্শন দিয়েছে এলাকাবাসীকে। বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের নেকড়ার পর মানবাজার দুই বনাঞ্চলের জয়পুরে মেলা ফেরত এক মোটরবাইক আরোহী ও বিক্রমডি গ্রামের বন দফতরের প্রচারের গাড়ির কর্মীদেরও রয়্যাল দর্শন হয়। শুক্রবার রাতেই বেলডুংরি এলাকায় পায়ের ছাপ মেলে। পদচিহ্ন মেলে যমুনগোড়াতেও। তারপর ভাঁড়ারির জঙ্গলে ভোর ৩ টে ২৪ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে সে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দেয়। বোঝা যায় ফের আস্তানা বদল করেছে প্রেমিক শার্দূল। আর মানবাজার দুই বনাঞ্চল নয়, ফিরে এসেছে বান্দোয়ানে।

রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল
দেবল রায় বলেন,” বনদপ্তরের পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় এই প্রথম পুরুলিয়ার জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি ধরা পড়লো।”
সাফল্যের পাশে আছে ব্যর্থতাও। আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে বাঘিনীর মূত্র স্প্রে করে তিনটি সবুজ খাঁচা পাতা হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল ছাগলের টোপ। তাতে বাঘ বন্দি হয়নি। এদিকে ট্র্যাপ ক্যামেরায়
ধরা পড়া ছবি দেখে শার্দূল সন্ধানে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ব্লু প্রিন্ট সাজিয়েছে বন দফতর। বিকাল ৩ টে থেকে একেবারে বাঘের ডেরায় গিয়ে বাঘ-বন্দি অভিযানে উপস্থিত ১৪টি দল। থাকবেন ঘুম পাড়ানি গুলি করতে অভ্যস্ত শ্যুটাররা।

একদিকে কেন্দাপাড়া। আরেক দিকে ঘাঘরা হয়ে কুমড়া। আরেক দিকে বান্দোয়ান সদর। সল্টলেক অরণ্য ভবনের নির্দেশে যে বাঘবন্দি অভিযান তাতে স্পষ্ট নির্দেশ ঝাড়খন্ড থেকে আসা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার যাতে কোনোভাবেই লোকালয়ে না ঢুকে পড়ে। এমনিতেই জঙ্গলে যাওয়া তিন তিনটে গবাদি পশু শিকার হয়েছে তার। নতুন করে শিকার হলে ক্ষোভ দেখা দিতে পারে।

কিন্তু আশার কথাও আছে। বাঘটি একেবারেই আক্রমণাত্মক নয়। বান্দোয়ানের জানিঝোড় গ্রামের বাসিন্দা যুধিষ্ঠির মাহাতো শুক্রবার সন্ধ্যায় বান্দোয়ানের তালপাত থেকে নিজের বাড়ি জানিঝোড় যাওয়ার পথে নেকড়া গ্রামের কাছে বাঘের দেখা পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “বাঘটা আমার মোটরবাইকের পাশ দিয়ে ডানদিকে গিয়ে দাঁড়ালো। আমি বাঘের পাশ কাটিয়ে পার হলাম। কিছুই করলো না ওই বাঘ। বুঝলাম বাঘটি আক্রমণাত্মক নয়। বাঘ যদি নিজের মতো করে জঙ্গলে থাকে, থাকুক। আমাদের কোন অসুবিধা নেই।”

রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র ) সিঙ্গরম কুলাণডাইভেল বলেন, বাঘের মর্জি বুঝে চলবেন তাঁরা। যেহেতু চারপাশে লোকালয়, তাই কারও যাতে কোন ক্ষতি না হয়, সেই চেষ্টাই অগ্রাধিকার পাবে।
বন দফতর সূত্রে জানা গেছে বান্দোয়ানের জঙ্গল থেকে জিনাতকে যেভাবে কোণঠাসা করা হয়েছিল, সেই একই পদ্ধতিতে এখানে ফটকা ফাটিয়ে আর হুলা পার্টির সাহায্য নেওয়া চলছে৷ হবে গজ শস্ত্রের ব্যবহার।






Post Comment