insta logo
Loading ...
×

বাঘিনী জিনাতকে খুঁজতে পুরুলিয়ায় বাঘ!

বাঘিনী জিনাতকে খুঁজতে পুরুলিয়ায় বাঘ!

সুজয় দত্ত ও বিশ্বজিৎ সিং সর্দার :

আশঙ্কা অবশেষে সত্যি। এক রাতে ১২ কিমি হেঁটে ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে দলমার চিমটি, পাকদা, নাইলম, গোবরঘুসি, ঝুঁঝকা হয়ে বাংলায় ঢুকে পড়ল জিনাতের আশিক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। আপাতত সে লুকোচুরি খেলছে জিনাতের পুরনো ঠিকানা কখনও বান্দোয়ান। আবার কখনও বেলপাহাড়ি। নাগাল পেতে হিমশিম খাচ্ছে বনদফতর।

লাগাতার ১২ দিন জিনাতের আশিক ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ঝাড়খন্ডের প্রায় ৩০ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়ে চরকিপাক খাওয়ায় সেখানকার বন দফতরকে। অবশেষে রবিবার পুরুলিয়ার বান্দোয়ান এক বনাঞ্চলের যমুনাগোড়ার জঙ্গলে পা রাখে সে। এমনটাই জানাচ্ছে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ।

কিন্তু ধন্দে পড়েছে বন বিভাগ।
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি যমুনাগোড়া থেকে এগিয়ে জিনাতের পুরুলিয়ার প্রথম ডেরা রাইকাপাহাড় হয়ে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির বাঁশপাহাড়ি রেঞ্জের মানিয়াডি জঙ্গলের দিকে চলে গিয়েছিল। ওইখান থেকে সে বান্দোয়ানের বনে ফিরে এসেছে? নাকি ফের ধরেছে ঝাড়খন্ডের পথ? বাঘের পায়ের ছাপ দেখেও ধন্দে বন দফতরের কর্তারা।
ফলে আবার নতুন করে রয়্যাল বেঙ্গল আতঙ্ক পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে। আতঙ্ক ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতেও।

রবিবার সকালের দিকে বান্দোয়ান ও বেলপাহাড়ি এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান। যমুনাগোড়ার বাসিন্দা বধূ টুডু, বলহরি টুডু বলেন, “সকালবেলা বনে যাওয়ার সময় জঙ্গলের দিকে বাঘের অনেকগুলো পায়ের ছাপ দেখতে পাই।” বাঁশপাহাড়ি বনাঞ্চলের মানিয়াডিতে বেশ কয়েকজন জঙ্গলের কুরকুট সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। তারা পেয়েছেন ওই বাঘের দর্শন। খবর দেওয়া হয় বনদফতরকে। বান্দোয়ান আর বেলপাহাড়ি দুই এলাকাতেই ফের জঙ্গলে যেতে নিষেধ করে শুরু হয়েছে মাইকিং।

বাঘের পায়ের ছাপ পরীক্ষা করে পুরুলিয়ার কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ জানিয়েছে, ১৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১২ সেন্টিমিটার চওড়া। এই পায়ের ছাপের সঙ্গে ঝাড়খন্ডে সংগৃহীত বাঘের পদচিহ্নর মিল আছে। তা থেকেই বাংলার বনবিভাগ নিশ্চিত, এটি ঝাড়খণ্ডেরই ওই রয়্যাল বেঙ্গলের।

জিনাতের গলায় ছিল রেডিও কলার। তার আশিকের গলায় তা নেই। ফলে ব্যাঘ্র সন্ধানে বান্দোয়ান ১ বনাঞ্চলের যমুনাগোড়া এলাকায় ট্র্যাপ ক্যামেরা লাগানোই বন দফতরের একমাত্র আয়ূধ। ঝাড়খণ্ডের দলমা এলিফ্যান্ট প্রজেক্ট ডিভিশনের পূর্ব বনাঞ্চলের রেঞ্জার অপর্ণা চন্দ্র বলেন, ” শনিবার দলমা এলাকার চিমটি, পাকদাতে বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া যায়। তারপর প্রায় ১২ কিমি পথ পেরিয়ে বসঘটি বাংলার বান্দোয়ানে ঢুকে পড়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি।”

পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের পক্ষে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে অরণ্যভবনেও। বাঘকে বাগে আনার রূপরেখা তৈরি করতে রবিবার রাতে বান্দোয়ানের কুইলাপালে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের কর্তারা বৈঠকে বসেন। খাঁচা, জাল এনে বাঁকুড়ার ঝিলিমিলিতে রেখে বাঘধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

২০২৪ এর শেষ দিন ৩১ শে ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোঁওয়া জেলার চান্ডিল বনাঞ্চলের চৌকা থানার তুলগ্রামের বালিডি জঙ্গলে ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটির প্রথম হদিশ পাওয়া গিয়েছিল। একটি গরুকে মেরেছিল সে। নিয়ে গিয়েছিল একটি বাছুরকে। তারপর ১২ দিন ধরে ঝাড়খণ্ড বন বিভাগকে সে কার্যত নাকানিচোবানি খাওয়ায়। কখনও সরাইকেলা- খরসোঁওয়ায় কখনও খুঁটি বনবিভাগের তামাড় রেঞ্জে, কখনও আবার রাঁচি – জামশেদপুর ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়ক টোল প্লাজার কাছে। সেখান থেকে ঝাড়খণ্ডের দলমা অভয়ারণ্যে। ফের চান্ডিলে প্রত্যাবর্তন। সড়কে গাড়ির হেডলাইটের সামনে দেখা গেছে তাকে। কখনও দেখা দিয়েছে বাড়ির উঠোনে। জিনাত হেঁটেছিল সোজা। একবারের জন্যেও অভিমানিনী পিছু ফিরে চায়নি। তার আশিক কিন্তু সোজা, বাঁকা, পিছু, আগু সব দিকেই হাঁটছে। মনে হচ্ছে কী খুঁজছে যেন। জিনাতকে? তেমনটাই অনুমান ঝাড়খণ্ডের ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ থেকে পুরুলিয়ার বনকর্তাদের।

রাজ্যের বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, “বেলপাহাড়িতে যে পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে তা বাঘেরই। বন দফতরের আধিকারিকরা জঙ্গলে রয়েছেন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।”

Post Comment