দেবীলাল মাহাত, আড়শা:
সাবেক মানভূমের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘টুসু’। পৌষ সংক্রান্তিতে টুসু পরবে মেতে ওঠে আট থেকে আশি সকলেই। কথায় আছে, দুর্গাপুজো বাঙালির জাতীয় উৎসব হলেও, সাবেক মানভূমে জাতীয় উৎসব টুসু। আর টুসু পরবের প্রধান উপকরণ চৌডল । তাই পৌষ সংক্রান্তির আগে রঙিন চৌডল বানাতে ব্যস্ত আড়শা ব্লকের বামুনডিহা গ্রামের যোগী পাড়ার চৌডল শিল্পীরা। দিন রাত জেগে চলছে চৌডল তৈরির কাজ। শিল্পীদের হাতে তৈরি রং বেরঙের চৌডল পৌষ সংক্রান্তির দিন এই জেলার নদী, জলাশয়কে আরও রঙিন করে তুলবে।
পুরুলিয়া জেলার যে কয়েকটি গ্রামে চৌডল বানানো হয় তার মধ্যে অন্যতম আড়শা ব্লকের বামুনডিহা। ঝাড়খণ্ড, বিহারে যে চৌডল যায় তা এখান থেকেই। প্রায় ২৫টি পরিবার চৌডল শিল্পের সাথে যুক্ত। শিল্পীরা জানান, বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত টুসুর চৌডলের বিক্রি কমে এসেছিল। ভাটা পড়েছিল শিল্পীদের কাজে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন মেলাতে চৌডল প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ায় কিছুটা হলেও সুদিন ফিরেছে। তাই এই বছরেও শিল্পীরা ভালো বিক্রির আশায় নিজের বাড়িতে চৌডল তৈরিতে মন দিয়েছেন। হাত লাগিয়েছেন বাড়ির মহিলা সহ ছেলে- মেয়েরাও। চৌডল শিল্পী ভূদেব যোগী, পাগল যোগী জানান, “বিভিন্ন মেলাতে চৌডলের প্রতিযোগিতার ফলে আমাদের চৌডল বিক্রি বেড়েছে। বিভিন্ন গ্রামের মহিলারা এসে বায়না দিয়ে যাচ্ছেন।” শিল্পীরা জানান, পৌষ মাস এলেই বাড়িতে চৌডল তৈরি করে সেনাবনা, আড়শা, বেলকুড়ি, বড়ট্যাঁড় হাটে গিয়ে তারা বিক্রি করেন । বিভিন্ন সাইজের এই চৌডল গুলি প্রতিটি ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকাতে বিক্রি হয়। শৌখিন চৌডল গুলির দাম থাকে ৫০০০-৭০০০টাকা।
বেশ কয়েক বছর ধরেই আড়শা ব্লকের দেউলবেড়ার টুসু মেলাতে চৌডল প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়ে আসছে। মেলা কমিটির সম্পাদক চিত্তরঞ্জন মাহাত জানান, “আমাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য আমরা মেলার আয়োজন করে থাকি। মেলার মূল আকর্ষণ চৌডল প্রতিযোগিতা। ফি বছর প্রচুর মানুষ চৌডল নিয়ে প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। এবছরও আর্থিক পুরষ্কার রয়েছে।” কাশিপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক ক্ষীরোদ চন্দ্র মাহাতো বলেন, “টুসু পরব পুরুলিয়া, বাঁকুড়া সহ সাবেক মানভূম এলাকার মানুষের লোক মহোৎসব। চৌডলকে টুসুর অধিষ্ঠান রূপে কল্পনা করা হয়। চৌডল আসলে মন্দিরের প্রতিরূপ।”
Post Comment