insta logo
Loading ...

বাঘবন্দি নয়, জালবন্দি গ্রাম

বাঘবন্দি নয়, জালবন্দি গ্রাম

সুজয় দত্ত, বিশ্বজিৎ সিং সর্দার :

বাঘবন্দি হল না জালে। গ্রামই হলো জালবন্দি। জিনাত যদি রাইকা পাহাড়ের জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামে হানা দেয়? তাই সুন্দরবনের ধাঁচে রাহামদা শবর টোলাকে ঘিরে ফেলা হলো জালে।

খেল দেখাচ্ছে বটে বাঘিনী!

তিনদিন তিনরাত ভুখাপেট মানুষই সহ্য করতে পারে না, আর এ তো রয়্যাল বেঙ্গল বাঘিনী। খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ের জঙ্গলে কি প্রথম বার প্রাণী হত্যা করল জিনাত? বন দফতরের পাতা ফাঁদের ছাগল শূকরে তার রুচি নেই। তিন দিন ভুখা পেটে থেকে নিজেই ছাগল শিকার করলো
জিনাত। রাইকা পাহাড়তলির রাহামদাতে নিজেই ছাগল শিকার করে পেট ভরালো ওড়িশার বাঘিনী।মোট পাঁচটি ছাগলকে খেয়েছে সে।তাদের দেহের কিছু অংশ পাওয়া গিয়েছে। জখম ৬ টি ছাগল। তাদের গলায়, শরীরে দাঁতের দাগ। এর মধ্যে শোভারাম মুর্মুর চারটি এবং গনেশ বাস্কের ১ টি ছাগল মারা গিয়েছে। উভয়েই রাহামদা গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামের পাধেই ভাঁড়ারি পা্হাড় জঙ্গল। সেখানেই বন দফতরের বারণ অগ্রাহ্য করে ছাগল চরতে পাঠানো হয়েছিল। আর সুযোগ ছাড়েনি ভুখা শেরনি।

আসলে বন দফতর বারণ করলেও দুদিনে বাঘ কিছুই করেনি দেখে কিছুটা ভয়ডরহীন হয়েই ছাগল চরতে পাঠিয়ে ছিলেন গ্রামবাসীরা। বলছেন রাহামদা গ্রামের চঞ্চল মাণ্ডি, বাহামনি মুর্মু, রমণী মুর্মু প্রমুখ।

সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প ছেড়ে এসে বাঘিনী ক্রমাগত হাঁটলেও বান্দোয়ানের রাইকায় এসে এই কয়েক কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে। ফিরে আসছে টোপের কাছে গিয়েও। নিচ্ছে বিশ্রাম।
জিনাত ভীষণই সতর্ক। ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ায় থাকতে জিনাত সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের টোপ হিসাবে দেওয়া মহিষ খেয়েছিল। সেখানে পরিকল্পনা ছিল টোপ খেতে এলেই ঘুম পাড়ানি গুলি করার। কিন্তু পরিকল্পনা সফল হয়নি। আর রাইকাতে পরিকল্পনা ছিল শেরনিকে খাঁচা বন্দি করার। সব কৌশল-ই ব্যর্থ দেখে মঙ্গলবার দু দফায় বান্দোয়ানে বনদপ্তরের অতিথি আবাসে বৈঠকে বসেছিলেন বন কর্তারা। ঠিক হয়েছে বাঘিনীর মর্জি মত-ই চলবেন রাজ্য বনবিভাগ সহ সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা। জিনাতকে ডিস্টার্ব করবেন না তারা। আপাতত যতদিন পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ে থাকবে, সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সহ বনদপ্তর তাকে ট্র্যাক করে যাবে। জানালেন দক্ষিণ পশ্চিম চক্রর মুখ্য বনপাল বিদ্যুৎ সরকার।


রাইকা পাহাড়ের একেবারে ভেতরে ঘন জঙ্গলে পর্যাপ্ত জল না থাকলেও বিভিন্ন ঝোরা থেকে আসা জল দুটি পুকুরে পড়ে। এছাড়া ওই পাহাড়ের জঙ্গলের বাইরে একটি চেক ড্যাম রয়েছে। তাছাড়া এই পাহাড়ে একাধিক গুহা রয়েছে। রয়েছে নেকড়ে, বন্য শূকর, হরিণের মতো বন্যপ্রাণও। সবে মিলিয়ে বাঘ থাকার ভীষণই অনুকূল পরিবেশ এই রাইকা পাহাড় তা মেনে নিয়েছেন বনকর্তারা।


আর তাই ওইটুকু কয়েক কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই ঘোরা ফেরা করছে বাঘিনী বলছেন কংসাবতী দক্ষিণ ডিএফও পূরবী মাহাতো।

ছাগল মারার পর পেট ভরেছে জিনাতের। এবার কিছুটা যেন আতঙ্কের ছাপ। তার ভয়ে ওই পাহাড় লাগোয়া একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জুনিয়ার হাইস্কুলের ঝাঁপ বন্ধ। রাইকা পাহাড়ের অধিকাংশ এলাকা শ্যাডো জোন থাকায় জিনাতের অবস্থান সব সময় বোঝা যাচ্ছে না। তাই পুরুলিয়া-বাঁকুড়া মিলিয়ে ৮টি ট্র্যাপ ক্যামেরা আনা হয়। এদিন থেকেই তা লাগানো হবে।

Post Comment