দেবীলাল মাহাত, আড়শা:
লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই। না কোন বাম দলের চিরাচরিত স্লোগান নয়, এ যেন শীতের মানভূমের জাতীয় সংগীত। শীত পড়ার সাথে সাথেই মানভূমে শুরু হয় মোরগ লড়াই। লড়াই ঘিরে বসে মেলা। শীতে লেপের উষ্ণ আদর,আর লড়াইয়ে পরাজিত মোরগের ‘পাহুড়’ মাংস। এক কথায় অসাধারণ । চাষির ঘর ভরে ওঠে গোলাভরা আমন ধানে। আর এই অবসরে গ্রামে গ্রামে বসে মোরগ লড়াইয়ের আসর। মোরগ লড়াইয়ের অপর নাম ‘ষাঁড়া’ লড়াই। এই লড়াইয়ের জন্য সারাবছর ধরে বাড়িতে পোষা হয় মোরগ। প্রতিপালন হয় যত্নের সাথে। সারা বছর লড়াই হলেও ,শীত পড়তেই ব্যাপক হারে মানভূমে শুরু হয় দুই যুযুধান মোরগের লড়াই। এর জন্য প্রতিদিন সকাল বেলা চলে মোরগের প্রশিক্ষণ। মোরগ লড়াই দেখতে ভিড় জমান সকলেই। সে যেন হৈ হৈ কান্ড,রৈ রৈ ব্যাপার।
এই মোরগ লড়াইয়ে যার মোরগ জিতবে, ঘায়েল মোরগ হয় তার। মোরগের বাঁ পায়ে বেঁধে দেওয়া হয় একটা ছুরি। যাকে বলা হয় ‘কাইত’। তারপর দুটি মোরগকে ছেড়ে দেওয়া হয় আসরে। আসরকে বলা হয় ‘আখড়া ‘। আসরের ভিতরে থাকে শুধু কাইতকার বা হাউসি। কাইতকারের সজাগ দৃষ্টি থাকে মোরগের দিকে । মোরগের দৃষ্টি থাকে প্রতিপক্ষের দিকে। সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রতিপক্ষকে ফালা ফালা করে দিতে চায় সে। ঝাঁপিয়ে পড়ার সাথে সাথে রসিকরা আওয়াজ তোলে “দিয়ে দিয়েছে” ,’একটু দাঁড়া’ অর্থাৎ এক উড়ানেই খেলা খতম । জিততে হলে লড়ে যেতে হবে শেষ অবধি। এই খেলার এটাই নিয়ম। লড়াই করতে করতে কেউ বসে যায় ,কেউ পালিয়ে যায়,কেউ মারা যায়। পরাজিত মোরগকে বলা হয় ‘পাহুড় ‘। জেতা মোরগকে বলা হয়’ জিৎকার ‘। ঘায়েল মোরগের চিকিৎসার জন্য, মাঠেই থাকে মোরগ চিকিৎসা কেন্দ্র। থাকেন চিকিৎসক।
দেশী,ময়ূরকন্ঠী,অন্ধ্রা , চায়না,কটকি, ফাইটার (তামিলনাড়ু), অয়েল টিয়ার সহ বিভিন্ন প্রজাতির মোরগ রয়েছে। রং হয়ে থাকে কালো,লাল, খয়েরি, সাদা প্রভৃতি। দাম জানেন? চমকে যেতে হবে। দাম ৫০০ থেকে ২০,০০০ টাকা ।
দীর্ঘদিন ধরে মোড়গ লড়াই করে আসছেন আড়শা ব্লকের তুম্বাঝালদা গ্রামের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন মাহাত। আদতে চিত্র শিল্পী হলেও, নেশা মোরগ লড়াই। সবাই তাকে চেনে মোরগ রসিক বলে। তিনি জানান, “বাড়িতে প্রায় ৫০টি মোরগ রয়েছে । মোরগ লড়াই হলেই সেখানে লড়াইয়ে জন্য উপস্থিত হয়ে যায়। শীতকালে মোরগের ঝাঁঝ থাকে বেশি। মোরগের মাংস সুস্বাদু হয়ে থাকে।আমন ধান বাড়িতে তোলার সাথে সাথে মানভূমের মানুষ বিনোদনের অন্যতম অঙ্গ মোরগ লড়াইয়ে মেতে ওঠেন।
Post Comment