insta logo
Loading ...
×

শীতেও ফাঁকা সিরকাবাদের আঁখের জমি, ধুঁকছে অর্থনীতি

শীতেও ফাঁকা সিরকাবাদের আঁখের জমি, ধুঁকছে অর্থনীতি

দেবীলাল মাহাত, আড়শা:

অযোধ্যাপাহাড়তলির রুখা এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল আঁখ। এক সময় এই ইক্ষুর রমরমা ছিল আড়শা ব্লকের সিরকাবাদ, আহাড়রা , গন্ধবাজার, লছমনপুর, নুনিয়া, হাড়মাডি প্রভৃতি এলাকায়। বিঘার পর বিঘা জমিতে চাষ হতো আঁখের। শীত পড়ার সাথে সাথেই গুড়ের গন্ধে ভরে উঠত এলাকা। দিন-রাত এক করে মাঠে চলতো আঁখের গুড় তৈরি করা। অযোধ্যা পাহাড় থেকে নামার পথে পর্যটকদের ঢল নামতো সেই মাঠে। ইক্ষু চাষের ওপরেই নির্ভরশীল ছিল এলাকার অর্থনীতি। কিন্তু এখন সে সব অতীত। বিভিন্ন কারণে বর্তমানে ধুঁকছে এই ইক্ষু শিল্প। সমস্যায় আঁখ চাষিরা।

আড়শা ব্লকের সিরকাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৩ হাজার একর জমিতে আখ চাষ হয়। ১০ হাজারের বেশি কৃষক পূর্বপুরুষ ধরে এই চাষের সাথে সরাসরি যুক্ত। এখানকার আঁখ চাষে জল লাগে না। তবে ভালো ভাবে জমি কর্ষন করে মাটি তৈরি করতে হয়। জমিতে এক বছর পরপর আঁখ চাষ হয়ে থাকে। এখানকার আঁখ থেকে তৈরি গুড় ভালো গুনমানের হওয়ায় সারা রাজ্য সহ ঝাড়খণ্ডেও চাহিদা থাকে। চাষিরা আঁখ থেকে গুড় তৈরি করে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, আসানসোল, ঝাড়খণ্ডের টাটা নগরে বিক্রি করতেন। তাছাড়া হলদিয়া, বর্ধমান, খড়গপুর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে লরিতে করে আঁখ কিনে নিয়ে যান ‌। ধান চাষের পাশাপাশি আঁখ চাষ করে আয়ের মুখ দেখতেন চাষিরা। আহাড়রা গ্রামের আঁখ চাষি পেশায় শিক্ষক অক্ষয় মাহাত বলেন, ” বেশ কয়েক বছর ধরে আঁখের ফলন কমেছে। আঁখ থেকে তেমন রস বার হচ্ছে না। যতটা পরিমাণে গুড় হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে এই চাষিদের। তাছাড়া কোনো কারনে আঁখের রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গিয়েছে । আঁখ লাল হয়ে যাওয়ার সাথেসাথে বেঁকে যাচ্ছে। শ্রমিকের অভাব তো আছেই।
চাষিরা জানান,দীর্ঘদিন ধরে এখানে এক ধরনের বীজে তারা চাষ করছেন। আর সেই বীজে ফলন ভালো হচ্ছে না। আঁখ বেঁকে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেশি দাম দিতে চাইছে না। ফলে অনেকেই এই চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন। বারবার কৃষি দপ্তরকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এদিকে দেরিতে হলেও শীত পড়েছে পুরুলিয়ায়। শীতে পুরুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কালিম্পংকে টেক্কা দেয়। কিন্তু এই শীতের মরশুমেও আড়শা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় আঁখ জমি ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। শীত এলেও কাজের ব্যস্ততা চোখে পড়ে না ইক্ষু চাষিদের। এইভাবেই হয়তো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে এখানকার একসময়ের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা এই আঁখ চাষ।

Post Comment