insta logo
Loading ...
×

কার্তিক সেজে ধুলো উড়িয়ে সেরা পুরস্কার পেলেন গাঁয়ের বধূ

কার্তিক সেজে ধুলো উড়িয়ে সেরা পুরস্কার পেলেন গাঁয়ের বধূ

সুজয় দত্ত , পুরুলিয়া:

“কার্তিকঅ মহাবীরঅ
রূপে অতি ভয়ঙ্কর হে এএএএ
মাতা যাকে পার্বতী, পিতা পঞ্চানন এ
শুন শুন সভাজন”
কতবার কার্তিকের মহড়া পরে তার নাচ উড়িয়েছে ধুলো। আর এই ধুলো উড়িয়ে জুটল সেরার সেরা পুরস্কার। দীর্ঘদিন যে বীররসের ছৌ নাচে একাধিপত্য ছিল পুরুষদের, সেই নাচে প্রত্যন্ত গ্রামের এক গৃহবধূ ছিনিয়ে নিলেন ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান যুব পুরস্কার। পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এক গাঁয়ের গৃহবধূ সুনীতা মাহাতো সঙ্গীত নাটক আকাদেমীর এই জাতীয় পুরস্কার পেয়ে উজ্জ্বল করলেন বাংলার নাম।

ছোটবেলা থেকে ছৌ নাচ তাকে টানতো। নাচলে আর বিয়ে দেওয়া যাবে না। এমন গঞ্জনা বারে বারে শুনতে হয়েছে সুনীতাকে।

কিন্তু তাতে কি শখ মেটে? তাই ছৌ শিল্পীদের দেখে আর
সেইসঙ্গে ইউটিউব চালিয়ে পায়ের তালে দিব্যি শারীরিক বিভঙ্গ সমন্বিত পৌরুষদীপ্ত
বীররসের নাচ রপ্ত করেছিলেন সুনীতা। ২০১৭ সাল থেকেই তিনি রাজ্যের লোকপ্রসার প্রকল্পের নথিভুক্ত একজন লোক শিল্পী। প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে ভাতা পান। সরকারি অনুষ্ঠান হলে পান হাজার টাকা। তাঁর জাতীয় সম্মাননা প্রাপ্তিতে খুশি রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ। পুরুলিয়া তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, ” ওই মহিলা ছৌ শিল্পীর জাতীয় সম্মানে রাজ্যের ফ্ল্যাগশিপ
লোকপ্রসার প্রকল্পকেই কেন্দ্র স্বীকৃতি দিল। এটা আমাদের কাছে গর্বের, সম্মানের। “
গত শুক্রবার ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ড.
ভীমরাও আম্বেদকর ভবনে পুরুলিয়ার এই মহিলা ছৌ শিল্পীকে সম্মাননা প্রদান করে সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে থাকা সঙ্গীত নাটক আকাদেমি। জাতীয় সম্মানের অর্থমূল্য হিসেবে তিনি ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার পান। এই প্রথম জেলার কোন মহিলা ছৌ শিল্পীর হাতে উঠল জাতীয় পুরস্কার। পরিবারে সেভাবে কোনদিনই
আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ছিল না। বাবা মুরলীধর মাহাতো একসময় ছৌ নাচিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে প্রাথমিক অনুপ্রেরণা সুনীতার। সুনীতাদের মাতঙ্গিনী হাজরা মহিলা ছৌ দলের তিনি ম্যানেজার। মাতঙ্গিনী দলের ওস্তাদ কিন্তু সুনীতা নিজেই। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড় হয়ে ওঠা সুনীতা বলছেন, ” ধামসার আওয়াজ শুনলেই পা টা যেন কেঁপে উঠতো l দূর থেকে ছৌ নাচ দেখে নাচতে মন চাইত। তারপর একদিন আয়নার সামনে নাচ শুরু করি। তারপর নাচতে থাকায় পাড়া-পড়শিরা কম অপবাদ দেননি। বলতেন
ছৌ নাচলে আর বিয়ে হবে না! পুরুষের নাচ তোরা কি আদৌ পারবি, এমন কত কি!”
২০১৯-এ টামনা থানার পুড়রু গ্রামে তাঁর বিয়ে। বিয়ের পরও ছৌ নাচ ছাড়তে পারেননি তিনি। পুরুলিয়া মফস্বল থানার বোঙ্গাবাড়িতে বাপের বাড়ি থেকে যেমন সাহায্য পেয়েছেন, ঠিক তেমনই চাষাবাষে যুক্ত থাকা
স্বামী রঞ্জিত মাহাতো তাঁকে সব সময় দিয়ে গিয়েছেন উৎসাহ। স্বামীর সঙ্গেই তিনি এখন দিল্লিতে। আজ রবিবার সঙ্গীত নাটক আকাদেমির অনুষ্ঠানে তাঁর মহিলা ছৌ দল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ পালা পরিবেশন করবে। ৮ মাসের মেয়েকে কোলে নিয়েই ওই মহড়া দেওয়াচ্ছেন সুনীতা। গাঁয়ে ঘরে আছে ৩ বছরের আরেক মেয়ে। সংসার সামলে ছৌ। একি দেবসেনাপতির চেয়ে কম সংগ্রাম!

Post Comment