দেবীলাল মাহাতো, আড়শা:
কথায় বলে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সেই অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে ইউটিউব দেখে ড্রাগন চাষ করে সকলকে তাক লাগালেন পেশায় কলকাতা পুলিশে কর্মরত, আড়শা ব্লকের তুম্বা-ঝালদা গ্রামের বাসিন্দা শান্তিরাম মাহাতো। অবসর সময়ে গতানুগতিক কৃষিকাজের দিকে না ঝুঁকে ড্রাগন চাষ করে সকলকে চমকে দিয়েছেন কলকাতা পুলিশের ওই কনস্টেবল। এখন তার বাড়ির উঠোন ও ছাদে শয়ে শয়ে ড্রাগন। বর্তমানে রাজ্য তথা জেলায় চাষ যোগ্য ফলের মধ্যে নতুন সংযোজন হয়েছে ড্রাগন। বাজারে ড্রাগন ফল সহজলভ্য হলেও জেলাতে সেভাবে চাষবাস হয় না। চাহিদার তুলনায় জোগান এখনও যথেষ্ট কম। এই ফলের উপকারিতাও বহুবিধ। ব্যবসায়িক দিক থেকে চাষ খুব-ই লাভজনক। শান্তিরাম মাহাতো জানান, লকডাউনে তিনি শুনেছিলেন ড্রাগন ফল খেলে শরীরের খুব উপকার হয়। করোনা সেরে যায়। তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নেন ড্রাগন চাষ করার। তারপর যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ইউটিউবে ড্রাগন চাষ করার পদ্ধতি দেখতে থাকেন। ইউটিউবে দেখেন, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাগদা এলাকার এক শিক্ষক ড্রাগন চাষ করে সাফল্য অর্জন করেন। যোগাযোগ করে প্রথমে তার বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন ১০টি ড্রাগন চারা। নিজে ৬টি চারা পুঁতে, কাছের এক বন্ধুকে দেন ৪টি । এরপর ভালো করে ইউটিউবে দেখে নেন চাষ করার পদ্ধতি। রোপনের এক বছর পরেই ড্রাগন গাছে চলে আসে ফুল, ফল। দারুন উৎসাহিত হয়ে পড়েন তিনি। গত বছরে নদীয়া থেকে নিয়ে আসেন ‘মরাক্ষান রেড প্রজাতির’ আরও ৩০০টি ড্রাগন চারা । সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চারা গুলো লাগিয়ে দেন উঠোন ও ছাদের ওপর টবে। গত বছর চারা রোপণ করার পর ইতিমধ্যেই সব গাছেই ড্রাগন ফল আসতে শুরু করেছে। বাড়িতে খাওয়ার সাথে সাথে বিক্রিও শুরু করেছেন বলে জানান শান্তিরাম বাবু। এক একটি ড্রাগন ফলের ওজন ৩০০-৪০০গ্রাম। তিনি আরও জানান, এই চাষে খুব একটা খরচ হয় না। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলেই মিলবে সাফল্য। ড্রাগন চাষ করার বিষয়ে কেউ উৎসাহিত হলে চারা, পরামর্শ সহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করবেন বলে তিনি জানান। তার অবর্তমানে বাড়ির সকলেই ওই গাছের পরিচর্যা করে থাকেন। গ্রাম ও শহরের বাড়িতে মিলে ৩৫০ টির অধিক ড্রাগন গাছ রয়েছে বলে তিনি জানান। শান্তিরাম বাবুর এই ড্রাগন চাষের সাফল্যের কথা পৌঁছেছে আড়শা ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা কৌশিক মাঝির কানেও। তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্লকের কৃষকদের বিকল্প চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। চাহিদা থাকলেও জেলাতে সেইরকম ড্রাগন ফলের চাষ হয় না। ড্রাগন চাষ করে শান্তিরাম বাবু যে সাফল্য দেখিয়েছেন তা দেখে ব্লকের বাকি চাষিরাও বিকল্প চাষে আগ্রহী হবেন বলে তিনি আশাবাদী। সেই সঙ্গে চাষিদের সব রকম বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
Post Comment