বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, সঞ্জয় চৌধুরী ও অমরেশ দত্ত :
বরাবাজার যদি শতবর্ষের গোড়ায়, তবে বলরামপুর পার করে ফেলেছে দ্বি শতবর্ষ। জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিহাস ছুঁয়ে এ যেন এক অনন্য ঐতিহ্যে স্নান।দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজোতে উন্মাদনা থাকলেও জগদ্ধাত্রী পুজোই বরাবাজারের মূল আকর্ষণ।বরাবাজার নামোপাড়ায় দেবী জগদ্ধাত্রী’র আরাধনা এবার ৯৯ বছরে। অন্যদিকে বলরামপুরের রাঙাডি গ্রামের ব্যানার্জি পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো। কথিত আছে মায়ের পূজো ২০০বছরের পুরনো। তবে বলরামপুরে পুজো হচ্ছে ১৯৭৬ সাল থেকে।
ব্যানার্জি পরিবারের বরিষ্ঠ সদস্য তথা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত প্রাক্তন শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ ব্যানার্জি জানিয়েছেন, পূর্বে বাঘমুণ্ডির মাদলা গ্রামে হতো এই পুজো। ১৯৭৬ সালে মাতৃমূর্তির কাঠামো নিয়ে আসা হয় রাঙাডিতে। তিনি জানান, “রাঙাডিতে এই পুজো ১৯৭৬ সালে আমার বাবা অমরনাথ ব্যানার্জীর উদ্যোগে প্রথম শুরু হয়। তার পূর্বে, আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে বাঘমুন্ডি থানার মাদলা গ্রামে পূজার প্রচলন ছিল। কোনো বিশেষ কারণবশত সেখানে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাবা সেখান থেকে প্রতিমা তৈরীর কাষ্ঠ নিয়ে এসে রাঙাডি গ্রামে প্রতিমা তৈরি করে পুজো শুরু করান। প্রতিষ্ঠা করা হয় মন্দির। “
এ যেন পারিবারিক মিলন উৎসব।ব্যানার্জি পরিবারের যে যেখানে থাকেন পুজো উপলক্ষে যোগ দেন ঘরোয়া অনুষ্ঠানে। পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন গ্রামের লোকজনেরাও। গোটা গ্রাম হয়ে ওঠে একটাই পরিবার। একসময় অনুষ্ঠানে থাকতো ছৌ নৃত্যের আয়োজন। আয়োজিত হতো যাত্রা পালা। আজকাল
ছৌ নৃত্য এবং যাত্রাপালার আয়োজন না হলেও, নৃত্য এবং সংগীত অনুষ্ঠানের এখনও প্রচলন রয়েছে।
পাশাপাশি পুরুলিয়া জেলার বরাবাজার নামোপাড়ায় জগদ্ধাত্রী পুজো আয়োজিত হয় সাড়ম্বরে। আজ রবিবার বরাবাজার নামোপাড়ায় জগদ্ধাত্রী’র আরাধনায় মন্দির প্রাঙ্গনে নেমেছিল ভক্তদের ঢল। এবারে দুর্দান্ত আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে মন্দির প্রাঙ্গণ। পাশাপাশি রীতি মেনে নবমীর দিন নর নারায়ণ সেবার আয়োজন করা হয়। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ জগদ্ধাত্রী পুজোতে যেমন অংশগ্রহণ করেন, তেমনই নরনারায়ণ সেবা অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেন হাজার হাজার মানুষ। বরাবাজার সদর শুধু নয়, পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দারাও সামিল হয়েছিলেন এদিন।
জগদ্ধাত্রী দেবী দুর্গার অপর রূপ। উপনিষদে তাঁর পরিচয় উমা হৈমবতী নামে। একাধিক পুরাণেও রয়েছে উল্লেখ। যদিও জগদ্ধাত্রী আরাধনা বললেই মানসপটে ভেসে আসে বাংলার হুগলি জেলার চন্দননগর, নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের নাম, তবু প্রত্যন্ত পুরুলিয়ার জগদ্ধাত্রী পূজা স্বকীয়তায় উজ্জ্বল।
Post Comment