insta logo
Loading ...
×

ফিরে এসো ঢেঁকি

দেবীলাল মাহাত, আড়শা:

যে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও নাকি ধান ভানে, কালিপুজার সময় বাঁদনা পরব এলে, তাতই কদর বাড়ে জঙ্গলমহলে।
ভোর থেকে শোনা যায়’ হুকুড়দুম্’ ,’হুকুড়দুম্’। বাঁদনা পরব মানেই চাল গুঁড়ির ব্যবহার। পিঠে পুলি বানানো, আলপনা দেওয়া, দেওয়ালে ছাপ দেওয়া। গুঁড়ির উপকরণ চাল। চাল কুটোতে লাগে ঢেঁকি। সেই কারনে প্রাচীন কাল থেকেই কৃষিভিত্তিক বাঁদনা পরবের সাথে ছিল ঢেঁকির সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গী। তবে আধুনিকতার যুগে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে কাঠের তৈরি যন্ত্রটি। দখল নিয়েছে আধুনিক মেসিন।
কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে সাবেক মানভূমে শুরু হয়’ বাঁদনা’ পরব। কৃষিকে কেন্দ্র করেই এই উৎসব। কৃষি ব্যবস্থায় ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ঢেঁকি। কৃষি উৎপাদনে ঢেঁকির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ঢেঁকি থেকে হয় চালের গুড়ি। মহিলারা চালের গুঁড়ি দিয়ে দেন আলপনা , তৈরি করেন পিঠে ,ছাপ দেন দেওয়ালে। এই জন্য প্রতিটি বাড়িতে থাকতো ঢেঁকি। বাঁদনা পরবের আগে মাটির ঘরকে সাজিয়ে তোলা হতো। তেমনি যত্ন নেওয়া হয় ঢেঁকির।তবে আধুনিকতার যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে ঢেঁকি। ঢেঁকির ব্যবহার কমে আসছে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে। সময়ের সাথেসাথে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার নিজস্ব ঘরানার খাদ্য তৈরির এই প্রক্রিয়া। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আবিষ্কারক কাঠের তৈরি যন্ত্রটি।সেই জাওয়ায় স্থান নিয়েছে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক মেশিন। আড়শা ব্লকের বামুনডিহা গ্রামের সীমা মাহাত বলেন, “পূর্ব পুরুষ ধরে আমাদের বাড়িতে ঢেঁকি রয়েছে। টেঁকিতে কোটা চাল দিয়ে তৈরি পিঠের স্বাদই আলাদা।”
এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি ছিল চাল ও চালের গুঁড়ি করার একমাত্র মাধ্যম ।গ্রাম্য জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। ঢেঁকি কোটা চাল ও ঢেঁকিতে কোটা চালের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি পিঠে স্বাদে ও গন্ধে মন ভরে যেতো। শীতের আগমনে ভোর বেলা হতেই শোনা যেতো ঢেঁকির আওয়াজ। ঢেঁকির আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গতো সকলের । শাল,মুরগা, কুসুম,বাবলা প্রভৃতি ভারি ও শক্ত কাঠ দিয়ে তৈরি হতো ঢেঁকি। লম্বায় ৫ থেকে ১০ফুট। ঢেঁকির বিভিন্ন অংশ থুঁসলা,শামি,কাঁড়ি, দাঁড়া,পাদানি নামে পরিচিত ছিল। ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে থাকতো ঢেঁকি ।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “কমলাকান্তের দপ্তর” প্রবন্ধ গ্রন্থে ঢেঁকির বর্ননা রয়েছে। আধুনিকতার যুগে কোনঠাসা হয়ে পড়লেও ঐতিহ্য ও স্বাদের গুণে আজও হারিয়ে যায়নি ঢেঁকি। কাশিপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক – ক্ষীরোদ চন্দ্র মাহাত বলেন, “প্রাচীন কাল থেকেই রয়েছে ঢেঁকির ব্যবহার। আগে প্রতিটি বাড়িতে থাকতো ঢেঁকি।কৃষিকাজে জড়িত মানুষের কাছে ঢেঁকির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।”

Post Comment