দেবীলাল মাহাত, আড়শা:
বাতাসে হালকা হিমের পরশ। ক্ষেত ভরেছে সোনালী ধানে। এই আবহে দীপাবলির অমাবস্যার রাত থেকে জঙ্গলমহল পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম সহ সাবেক মানভূমে শুরু হয়েছে ‘বাঁদনা’ পরব। আমন ধান বাড়িতে তোলার আগে পরবে মেতেছে জঙ্গলমহলের কৃষিজীবী মানুষ। মেতে উঠবেন ‘গরুখুঁটা’তেও। এই পরব আসলে পুরুলিয়া,বাঁকুড়া ঝাড়গ্রাম সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কৃষিজীবি সম্প্রদায়, বিশেষ করে আদিবাসী ও কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষের প্রাণের উৎসব। গবাদি পশুদের কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্যই উৎসবের নিবেদন। কারণ কৃষিভিত্তিক সভ্যতায় এই গবাদি পশুদের অবদান অপরিহার্য। গৃহস্থের শ্রীবৃদ্ধির জন্য এরাও সারা বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকে।আর এই বাঁদনা পরবের মূল আর্কষন ‘গরুখুঁটা’। দুদিন ধরে গরুকে সেবা যত্ন করে উৎসবের তৃতীয় দিনে বিকাল বেলায় গ্রামের ফাঁকা মাঠে অথবা কুলিতে সবল গরুগুলোকে বিভিন্ন রং এ সাজিয়ে একটি শক্ত খুঁটিতে বাধা হয় ।শিং এ দেওয়া হয় সর্ষের তেল।মাথায় পরানো হয় ধানের শিষ দিয়ে তৈরী গয়না (মোড় )। তারপর সামনে মৃত পশুর চামড়া ঘুরিয়ে তাকে উত্তেজিত করে তোলা হয় । সেই সঙ্গে চলে ঢোল,ধামসা সহযোগে অহিরা গীত পরিবেশন । চামড়ার গন্ধে ও গীত-বাজনার আওয়াজে খুঁটিতে বাঁধা গরুটি আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। উন্মুক্ত অবস্থায় গরু লাফালাফি করতে থাকে। তা দেখে উপস্থিত সকলেই আনন্দ ও উচ্ছাসে ফেটে পড়েন।আসলে গরু খুঁটা হল সোনালী ফসল ঘোরে তোলার আগে গবাদি পশুকে বোঝা বোঝা ঘাস খাইয়ে কসরৎ করিয়ে প্রস্তুত করা । এই ভাবে কৃষ্ণা চতুর্দশী থেকে তিন দিন ধরে উৎসবে মুখর হয়ে হাজার হাজার বছর ধরে কাল কাটাচ্ছে জঙ্গলমহল। আধুনিকতার মাঝেও আন্তরিকতার সঙ্গে গবাদি পশুদের বন্দনা করে আনন্দে মেতে ওঠে কৃষি জীবি মানুষ। এভাবেই তারা ধরে রেখেছে তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে। কাশিপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক ক্ষীরোদ চন্দ্র মাহাত বলেন – “বাঁদনা পরব তিন দিন ধরে গরু,গাভীদের কৃতজ্ঞতা জানানোর উৎসব। ‘গরুখুঁটা ‘ মধ্য দিয়ে গরুদের সঙ্গে খেলায় আনন্দে মেতে ওঠে সকলে। অহিরা গান সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে গরু গাভীদের ধন্যবাদ জানাতে এই উৎসব করে থাকেন। তাদের কষ্ট দিতে নয়, নিছক আনন্দ দানের জন্যই উৎসবের পালন।
Post Comment