insta logo
Loading ...
×

৩৫ বছরের বিচ্ছেদ মিটলো এসআইআর কৃপায়, ঘরে ফিরলেন বিবেক

৩৫ বছরের বিচ্ছেদ মিটলো এসআইআর কৃপায়, ঘরে ফিরলেন বিবেক

নিজস্ব প্রতিনিধি, রঘুনাথপুর :

৩৫ বছরের দীর্ঘ বিচ্ছেদ। অভিমান, দুঃখ আর দূরত্বে যেটা একসময় প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল, সেই সম্পর্কের সেতু মেলাল এসআইআর বা ভোটার তালিকার বিশেষভাবে নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া। আর সেই সূত্র ধরেই পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২ নং ব্লকের গোবরান্দা গ্রামের চক্রবর্তী পরিবারে নেমে এল খুশির জোয়ার।

বৃহস্পতিবার সকাল। ঘড়িতে তখন সাড়ে আটটা। কলকাতা পুলিশের কর্মী মামাতো ভাই রামানুজ পাঠক মোটরবাইকে করে বাড়ির দরজায় নিয়ে এলেন ৬৫ বছরের বিবেক চক্রবর্তীকে। অভিমানে তিনি বাড়ি ছেড়েছিলেন সাড়ে তিন দশক আগে।
ডান হাতে মিষ্টির প্যাকেট। কিন্তু চোখে অচেনা অস্বস্তি। দীর্ঘ বিচ্ছেদের দুঃসহ ঘোর কাটতে সময় লাগছিল। বাড়ির ঘর-দোর, পথঘাট, এমনকি প্রিয় মুখগুলোও যেন অপরিচিত।
দরজায় দাঁড়িয়ে ছোট ভাই প্রদীপ চক্রবর্তী। একে একে ভাই-বোন-আত্মীয়দের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই ভেঙে পড়লেন বিবেকবাবু। বাবা-মা আর নেই— এই উপলব্ধি আরও অশ্রুসিক্ত করে তুলল আবহাওয়া।
এদিকে কিছুক্ষণের মধ্যেই আদ্রা থেকে ছোট বোন বুলা মিশ্র, আর পুরুলিয়ার পাড়া থেকে বড় বোন সুনীতি মিশ্র পৌঁছে যেতেই বাড়ির উঠোন ভরে ওঠে কান্না, হাসি, আবেগের জোয়ারে।

১৯৮৮ সালে ঝাড়খণ্ডের সিন্দরিতে একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন বিবেক চক্রবর্তী। ১৯৯০-৯১ নাগাদ হঠাৎই পরিবারের সঙ্গে অভিমানে বাড়ি ছেড়ে ওড়িশায় চলে যান। সেখান থেকে আবার কলকাতায়। নতুন শহরে সংগ্রাম ছিল তীব্র। টিউশন পড়ানো থেকে শুরু করে প্রোমোটিং ব্যবসা, ভাড়া বাড়িতে থাকা — দু’বছর ধরে লড়াই করেই দাঁড়িয়েছিলেন নিজের পায়ে।
সেখানেই প্রেম, বিয়ে— নদিয়ার কৃষ্ণনগরের মেয়ে সুপ্রিয়া চক্রবর্তী হয়ে ওঠেন তাঁর জীবনসঙ্গিনী। পরে আসে সন্তান বিশাল। গত বছর দমদমে নতুন ফ্ল্যাটও কেনেন তাঁরা। সুপ্রিয়া দেবী বহুবার গ্রামের বাড়িতে যেতে বলেছেন, তবুও বিবেক বাবু আর ফেরেননি।
বিবেকবাবু বলছেন, “অভিমানের কথা খুলে বলব না। পুরনো কথা থাক। এখন দশটা দিন শুধু পরিবারের সঙ্গেই কাটাব।”

এসআইআর-এর তালিকা দেখে ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে ঠাকুরদার নাম খুঁজতে গিয়ে বিশাল অনলাইনে বিএলও-র নম্বর পান। ফোন করতেই জানা যায়— সেই বিএলও-ই তাঁর কাকা প্রদীপ চক্রবর্তী। তারপর আর দেরি হয়নি। ঘটল বিস্ময়কর পুনর্মিলন।

বিএলও-র দায়িত্ব পালন করা প্রদীপ চক্রবর্তী জানালেন, যদি বিএলও না হতাম, যদি এসআইআর না হতো, তবে দাদার সঙ্গে হয়তো আর কখনওই দেখা হতো না।

বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে চক্রবর্তী পরিবারে উৎসবের আবহ। ফুল দিয়ে, পুষ্পস্তবক তুলে, খুশিতে ভাসিয়ে স্বাগত জানালেন সবাই। পড়শিরাও ছুটে এলেন আনন্দ ভাগ করে নিতে।
আদ্রা থেকে ছুটে আসা বোন বুলা মিশ্র বলছেন, “এবার দাদাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখব— আর পালাতে দেব না!”

Post Comment