নিজস্ব প্রতিনিধি, সাঁওতালডিহি
নবজাতক কন্যাকে কোলে নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস। আর সেই মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রইল সাড়ে চার বছরের পুত্র। পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহি থানার ডুমুরডিহা গ্রামের মল্লিক পাড়ায় শনিবার দুপুরে ঘটে গেল এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। স্বামীর ছুরির কোপে মৃত্যু হল নয়ন দেশওয়ালির (৩৪)। ঘটনার পর নিজেই ছেলেকে নিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করে অভিযুক্ত স্বামী সুবল দেশওয়ালি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার বাবা পাড়া থানার কেতলাপুর গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত দেশওয়ালি অভিযোগে জানিয়েছেন, প্রায় ১৫ বছর আগে নয়নের বিয়ে হয় সুবলের সঙ্গে। সেই সময় অভিযুক্ত বাঁকুড়ার বিদ্যুৎ দফতরে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চলত। কর্মস্থলে থাকাকালীন বা গ্রামে এলেও প্রায়ই বচসা থেকে হাতাহাতি গড়াত মারধরে।
সম্প্রতি সুবল পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করছিলেন। স্ত্রী নয়ন ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছিলেন ডুমুরডিহায়। কেবল ২৮ দিন আগেই তিনি জন্ম দেন এক কন্যাসন্তানের। কিন্তু সেই আনন্দই কাল হল নয়নের জীবনে। অভিযোগ, সন্তান জন্মের পর থেকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বাড়িয়ে দেয় সুবল।
শনিবার দুপুরে চিৎকার শুনে নয়নের বোন মীনাক্ষী দেশওয়ালি ছুটে যান বোনের বাড়িতে। দরজা খুলে যা দেখলেন, তা যেন দুঃস্বপ্ন— রক্তে ভেসে পড়ে আছেন দিদি নয়ন, কোলের পাশে কাঁদছে সদ্যোজাত শিশু। হাতে রক্তমাখা ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে সুবল, পাশে দাঁড়িয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছে সাড়ে চার বছরের ছেলে।
অভিযোগ, মীনাক্ষীকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় সুবল, ছেলেকে মোটরবাইকে চাপিয়ে সরাসরি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে।
পরে পুলিশ এসে গুরুতর জখম নয়নকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। চিকিৎসকদের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যু হয়েছে।
সাঁওতালডিহি থানার পুলিশ অভিযুক্ত সুবল দেশওয়ালিকে রবিবার রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে তোলে। আদালত তার ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
এই নির্মম ঘটনার পর, এক নবজাতক ও এক সাড়ে চার বছরের শিশু এখন মা-হারা। দুই নাবালক আপাতত আত্মীয়দের তত্ত্বাবধানে।









Post Comment