নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :
পুলিশের আপত্তি। আর তাই কোটশিলার জিউদারু হাইস্কুল সংলগ্ন ময়দানে হচ্ছে না ২৯ অক্টোবর আদিবাসী কুড়মি সমাজের জনসভা। কোটশিলা কলেজ সংলগ্ন ময়দানে কিছু শর্ত সাপেক্ষে জনসভা, র্যালি ও থানায় ডেপুটেশন কর্মসূচি পালনের জন্য সমাজকে অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট। শর্তগুলো হলো-
১. কোনও সময়েই ১,০০০ জনের বেশি উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
২. সাম্প্রদায়িক, উত্তেজনামূলক বা জনমানসে আঘাত হানতে পারে—এমন কোনও স্লোগান, বক্তৃতা বা বিবৃতি দেওয়া যাবে না।
৩. হিংস্রতা উসকে দিতে পারে বা জনশৃঙ্খলা নষ্ট করতে পারে—এমন কোনও কার্যকলাপ, প্রদর্শন বা প্ররোচনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
৪. আয়োজকদের আগেভাগে ভিড় নিয়ন্ত্রণে সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা স্থানীয় থানায় জমা দিতে হবে।
৫. পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশ কঠোরভাবে মানতে হবে।
৬. যে কোনও শর্ত লঙ্ঘন হলে সঙ্গে সঙ্গে অনুমতি প্রত্যাহার করা হবে।
৭. র্যালি দুপুর ১২টায় কোটশিলা বস্তি মোড় (কোটশিলা কলেজ মোড়) থেকে শুরু হয়ে দুপুর ২টার মধ্যে কোটশিলা মহাবিদ্যালয়ের পিছনের খোলা মাঠে শেষ হবে।
৮. আবেদনকারী পক্ষ বিকেল ৩টায় কোটশিলা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে গণ-ডেপুটেশন পেশ করবেন। তবে, সর্বোচ্চ পাঁচজন প্রতিনিধি ওই ডেপুটেশন জমা দিতে পারবেন।
নির্দেশে হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, পুলিশ প্রশাসনের নির্ধারিত শর্তাবলি মেনে চলার শর্তে আবেদনকারীকে সভা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি মিছিলেও কোনও সময়েই অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা এক হাজারের বেশি হতে পারবে না।
আদিবাসী কুড়মি সমাজের ঝালদা ২ নম্বর ব্লক কমিটির সভাপতি অনিল মাহাতো গত ২৫ অক্টোবর কোটশিলা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে ২৯ অক্টোবর সভা ও মিছিলের অনুমতির জন্য আবেদন জমা দিয়েছিলেন। তবে তাঁদের দাবি সেই আবেদনের কোনও সদুত্তর না মেলায় আদিবাসী কুড়মি সমাজ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। মঙ্গলবার মামলার শুনানি হয় বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের এজলাসে। আদিবাসী কুড়মি সমাজের পক্ষের আইনজীবী সৌগত মিত্র আদালতে জানান, নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে কোটশিলা কলেজ মাঠে মিছিল ও সভা আয়োজনের অনুমতির পাশাপাশি, গণ-ডেপুটেশন পেশ করার অনুমতি মিলেছে।
পুনরায় আদিবাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবিতে লাগাতার জারি আদিবাসী কুড়মি সমাজের আন্দোলন। গত ২০ সেপ্টেম্বর এই ইস্যুতে তাঁদের ডাকা রেল অবরোধ ও পথ অবরোধকে অসাংবিধানিক ও বে আইনি বলেছিল আদালত। পুলিশকে বলেছিল ব্যবস্থা নিতে। আর তারপরই সমাজের পক্ষ থেকে বারবার ওঠে পুলিশি সন্ত্রাসের অভিযোগ। কোটশিলা স্টেশনে নেমে সমাজের পক্ষ থেকে রেল অবরোধের চেষ্টা হয়। আক্রান্ত হয় পুলিশ। গ্রেফতার ৫১ জন। পুলিশি সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে টামনা নতুন বাসস্ট্যান্ডে কুড়মি সমাজের জনসভা। এতদূর পর্যন্ত কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত প্রসাদ মাহাতোর হাতেই ছিল সমাজের লাগাম। তারপরই মঞ্চে আবির্ভাব কুড়মিদের তরুণ নেতা ঝাড়খণ্ডের ডুমরির বিধায়ক টাইগার জয়রাম মাহাতোর। ১৯ তারিখ জয়রাম আসেন জিউদারু। ফোনে কথা বলেন পুলিশ সুপারের সঙ্গে। আর তারপরই জিউদারু গ্রামের বিরাট পরিবর্তন। ওইদিনই গ্রামের একাধিক মহিলা কোটশিলা থানায় এসে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে চান। তার প্রেক্ষিতে পরের দিনই ২১ অক্টোবর
পুলিশ সুপার ওই গ্রামে গিয়ে মহিলাদের কথা শোনেন। ২৪ তারিখ সকল ধৃতের জামিন হয়।
সমাজের তরুণ প্রজন্ম জয়রামে আকর্ষিত দেখেই কি জেকেএলএম নেতা টাইগারকে বেনজির ভাবে আক্রমণ করলেন মূল মানতা? ২৪ তারিখের সেই ভিডিও ভাইরাল। মূল মানতা টাইগারকে ভাড়াটে খেলোয়াড় বলে কটাক্ষ করে প্রশ্ন তোলেন–
১) টাইগার জয়রাম মাহাতো জিউদারুতে কেন এলেন?
২) সেখানে এসে পুলিশের দোষ নেই কেন বললেন?
৩) বরো প্লেয়ার ( ভাড়াটে খেলোয়াড়) কীভাবে খেলবে?
৪) এখানে আন্দোলনের ইতিহাস কী সেটা তোমাকে জানতে হবে।
৫) তুমি না জেনে এখানে ঢুকে যাচ্ছ? তাই সবাইকে বলছি আপনারা ঠিক থাকবেন। রাজনীতি থেকে সাবধান।
পালটা প্রশ্ন সমাজেরই অন্দরে। একবার মূল মানতা বলছেন রাজনীতি থেকে সাবধান থাকতে, আবার তিনিই লোকসভায় ভোটে দাঁড়াচ্ছেন, পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াচ্ছেন সমাজের প্রার্থীরা। এমন দ্বিচারিতা কি সমাজের আন্দোলকে পিছিয়ে দিচ্ছে না? তাহলে ভাড়াটে খেলোয়াড় কে? সমাজের একটা অংশের বক্তব্য, আগামী ২ নভেম্বর জয়পুরের ফরেস্ট মোড়ের গোবিন্দ মাহাতো স্টেডিয়ামে ঝাড়খন্ড লোকতান্ত্রিক ক্রান্তিকারী মোর্চার সুপ্রিমো তথা ঝাড়খণ্ডের ডুমুরির বিধায়ক ‘টাইগার’ জয়রাম মাহাতোর সভা। ইতিমধ্যে সেই সভা ঘিরে তুমূল আগ্রহ কুড়মি সমাজের মধ্যে। সেই আগ্রহ দেখেই কি আন্দোলনের রাশ নিজের হাত থেকে চলে যাবে আশঙ্কা করেই কি টাইগারকে আক্রমণ করছেন অজিত বাবু?
মঙ্গলবার অজিত বাবু জিউদারু থেকে ভিডিও বার্তায় বলেন, “কুড়মি আন্দোলনে নেমে যাঁরা জেলে ছিলেন তাঁরা কুড়মিদের সবচেয়ে বড়ো উৎসব বাঁধনায় অংশ নিতে পারেননি। তাই বেনজির ভাবে ২৯ তারিখ গরুখুঁটা ও কাড়াখুঁটা আয়োজন করা হবে কোটশিলায়। কুড়মি আন্দোলনে ধৃত ৫১ জনকে সম্বর্ধনা দেবে সমাজ।”
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ যথাযথ পালন করা হবে।”










Post Comment