বিশ্বজিৎ সিং সর্দার, জয়পুর :
পুরুলিয়ার জয়পুরে পূজিতা হন কনক দুর্গা। সারা বছর ঠাকুর থাকেন ব্যাঙ্কের লকারে। দুর্গোৎসবে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দেবীকে ব্যাঙ্কের লকার থেকে মণ্ডপে আনা হয়। পুজোর কটা দিন মা থাকেন সর্বসাধারণের মধ্যে। সিসিটিভির ঘেরাটোপে কড়া পুলিশি পাহারার মধ্যে থাকেন কনক দুর্গা।
এই পুজোকে ঘিরে প্রবল উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায় পুজো দেখতে আসা মানুষের মধ্যে। পুজো শেষ হতেই ফের পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে মাকে ব্যাঙ্কে রেখে আসা হয়। বছরের পর বছর এই ভাবেই জয়পুর রাজবাড়িতে দুর্গাপুজো পালিত হয়ে আসছে।
রাজবাড়ির সদস্য প্রশান্ত নারায়ণ সিংহ দেও জানিয়েছেন তাঁর বয়স ৭৪বছর, তিনি ছোটবেলা থেকেই এই পুজো দেখে আসছেন। রাজবাড়ির পুজোকে ঘিরে মানুষের মধ্যে প্রবল উন্মাদনাও লক্ষ্য করা যায়। পুজোর দিনগুলোতে পূজো দেখতে আসা দর্শনার্থীদের ভিড়ও থাকে চোখে পড়ার মতো। যদিও পারিবারিক কারণে রাজবাড়ির পূজাতে গত দু’বছর আসেননি সোনার দেবী। কিন্তু এই বছর লকার থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে মাকে,থাকছে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা।
জয়পুরের ইতিহাসে মহারাজা কাশীনাথ সিং-এর অবিস্মরণীয় দান সোনার দুর্গা। রাজপরিবার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে সালটা ১৮৩০ – ১৮৩৫-এর মধ্যে হবে। জয়পুরের রাজবাড়ির দুর্গামন্দিরের খড়ের চালায় লেগে যায় আগুন। পূর্বে জয়পুর রাজবাড়ির দুর্গোৎসবে মূর্তি পূজা হত না। হত নবপত্রিকা এবং জয়পুরের প্রতিষ্ঠাতা জয়সিং-এর কিংবদন্তীতে মোড়া খড়্গের পুজো। সম্ভবত আগুন লেগেছিল ঘি-এর প্রদীপ থেকে।
চিন্তিত রাজা কাশীনাথ সপরিবারে ধর্ণা দিলেন মন্দিরে। কথিত আছে তিনি এসময় দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। সেই আদেশ অনুযায়ী বেনারস থেকে দেবীর দ্বিভূজা স্বর্ণমূর্তি গড়িয়ে আনা হয়। উচ্চতা আড়াই ফুট। এক সের সোনা দিয়ে মূর্তিটি তৈরি হয়েছে। সঙ্গে দেড় মন রূপার দৃষ্টিনন্দন সিংহাসন। মঙ্গলঘটের উপর রাখা থাকে দেবী মূর্তি। পাশে একই মাপের দু’টি বেল। থাকে দেবীর স্বর্ণাচরণ। নবপত্রিকা ও খড়্গ অসি। ১৯৭০ সালে ভয়াবহ ডাকাতি ঘটে যায় রাজবাড়িতে। দেবীর বহু অলঙ্কার আরও নানা জিনিসের সাথে চুরি যায়। ঈশ্বরের অপার লীলায় ডাকাতদল লাল শালুতে মোড়া দেবীমূর্তি দেখতে পায়নি। সেই থেকে ব্যাঙ্কের লকারে সারাবছর থাকে দেবীমূর্তি। জনগণের সামনে তার প্রকাশ ষষ্ঠী থেকে বিজয়া পুজোর এই কটি দিন।
Post Comment