insta logo
Loading ...
×

অক্টোবরেই সাইক্লোন মোন্থা?

অক্টোবরেই সাইক্লোন মোন্থা?

নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া :

বর্ষার ধকল কেটে গিয়েছে, মাঠে ধান পেকে উঠছে, আকাশ ঝকঝকে—এই সময়েই ফের সমুদ্রের দিক থেকে ভেসে আসছে নতুন উদ্বেগের খবর। দক্ষিণ আন্দামান সাগরের কাছে তৈরি হচ্ছে নতুন ঘূর্ণাবর্ত। আবহবিদদের আশঙ্কা, সেটি ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপ, তার পর ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে। সম্ভাব্য নাম ‘মোন্থা’। নামটি দিয়েছে কাতার—অর্থ ‘সুন্দর ও মূল্যবান মুক্তা’। তবে মুক্তার ঝলক নয়, এবার সেই নামই হয়তো শীতের শুরুতে পূর্ব উপকূলে বয়ে আনবে ত্রাস।

আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে উত্তর ভারত মহাসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটি নিষ্ক্রিয় হতেই আন্দামান সাগরের কাছে নতুন ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে। এখনই নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও, সেটি শক্তি সঞ্চয় করলে সম্ভাব্য অভিমুখ হতে পারে ভারতের পূর্ব উপকূল—বাংলা, ওড়িশা বা অন্ধ্র প্রদেশের দিকে।

অক্টোবরের চতুর্থ সপ্তাহেই তাই সতর্ক থাকতে বলছেন আবহবিদরা। তবে আপাতত পশ্চিমাঞ্চলে কোনো নিম্নচাপ নেই, নেই বৃষ্টির পূর্বাভাসও। ফলে কালীপুজো ও দীপাবলিতে একেবারে মেঘমুক্ত রোদঝলমলে আকাশই দেখা যাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

কিন্তু এই সম্ভাব্য ঝড়ের আগে পুরুলিয়া যেন এক দশকের রেকর্ড ভেঙে শীতের আগমনী বার্তা পেয়েছে। মঙ্গলবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ১৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, সর্বোচ্চ ৩৩.২ ডিগ্রিতে। জেলা উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) আদিত্য দুয়ারির কথায়, “সমগ্র বর্ষার মরশুমে পুরুলিয়ায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে—যা সাম্প্রতিক কালে রেকর্ড।”

জুন মাসের ১ তারিখ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পুরুলিয়ায় বৃষ্টি হয়েছে ১৬৫৫.৩৭ মিলিমিটার—স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৪৯.৪ শতাংশ বেশি। দশ বছর ধরে এমন বর্ষা দেখেনি জেলা। জুন-জুলাইয়ে ৯০ শতাংশেরও বেশি অতিবৃষ্টির জেরে রেকর্ড ভেঙেছিল পুরুলিয়া, এবার পুরো মরশুমেই তা বজায় রেখেছে।

বর্ষা বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুলিয়ায় নেমে এসেছে হিমেল হাওয়া। ভোরের দিকে পাখা বন্ধ করে ঘুম, আবার সকালের দিকে হাঁটতে বেরোলেই শীতের অনুভব। পর্যটনেরও রমরমা—অযোধ্যা পাহাড়, বড়ন্তি, গড় পঞ্চকোট, জয়চণ্ডী পাহাড় কিংবা দুয়ারসিনি—সব জায়গাতেই ভিড় বাড়ছে।

চাষিদের মুখেও হাসি। অতিবৃষ্টির কারণে শুরুতে কিছুটা সমস্যা হলেও পরে নিয়মিত বৃষ্টিতে আমন ধানের বীজতলা ও চারা ভালোভাবে বেড়েছে। কৃষি দফতরের অনুমান, এ বছর আমন উৎপাদনে পুরুলিয়া নতুন রেকর্ড গড়বে।

তবে এই সুখবরের মাঝেই শঙ্কার ছায়া ফেলছে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’। এখনও নিম্নচাপ তৈরি না হলেও, সাগরের ওপরের বাতাসের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে আবহাওয়া দফতর। সাগরে ঘূর্ণাবর্ত বেশি দিন স্থায়ী হলে তার শক্তি বাড়তে পারে—সেই আশঙ্কাতেই এখন নতুন করে চিন্তিত পশ্চিমাঞ্চল।

হেমন্তের রোদে সোনালি ধান দুলছে ঠিকই, কিন্তু পুরুলিয়ার মানুষ এখন ভাবছেন—অক্টোবরেই যদি সাইক্লোন মোন্থা এসে পড়ে, তবে তা কি পাকা ধানে মই দেবে?

Post Comment