নিজস্ব প্রতিনিধি, বলরামপুর:
মহালয়ার ভোরে পিতৃতর্পণ করতে গিয়ে ঘটল এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। তর্পণের উদ্দেশ্যে পুকুরে স্নান করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন এক যুবক। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এল পরিবার থেকে গ্রাম জুড়ে। রবিবার ভোরে পিতৃতর্পণের জন্য পুরুলিয়ার বলরামপুর থানার বাঘাডি গ্রামের বাসিন্দা অশোক মোদক (৩৭) গ্রামের পার্শ্ববর্তী মা-গোঁসাই নামে পরিচিত পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিলেন। স্নানের সময় আচমকাই তিনি জলে তলিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে বাঁশগড় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার খবর পেয়ে বলরামপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
অশোকবাবুর পরিবারের এক আত্মীয় ভেঙে পড়া কণ্ঠে বলেন, “রবিবার ভোরে তর্পণের জন্য পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিল অশোক। কে জানত এমন অঘটন ঘটবে! এদিনটা সারা জীবনের জন্য আমাদের কাছে অভিশপ্ত হয়ে রইল।”
অন্যদিকে, একই দিনে জেলাজুড়ে তর্পণের আবহে মানুষের ঢল নামে। ঝালদার তুলিন সুবর্ণরেখা নদীর ঘাটে সকাল থেকেই উপচে পড়ে ভক্তদের ভিড়। মহালয়ার ভোর থেকে নদীর ধারে ভক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি হয়। জেলার নানা প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ সেখানে এসে তর্পণ-এ শামিল হন।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, ‘তর্পণ’ শব্দের অর্থ সন্তুষ্ট করা বা শ্রদ্ধা নিবেদন করা। দেবতা, ঋষি ও বিশেষ করে পরলোকগত পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল, তিল ও নৈবেদ্য অর্পণ করে তাদের তুষ্ট ও তৃপ্ত করার এই বৈদিক আচার প্রতিবছর মহালয়ার দিনে পালিত হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে জেলার প্রতিটি নদী ও জলাশয়ে এদিন সকালে ভক্তদের ভিড় চোখে পড়ে।
তর্পণে শামিল হওয়া হারাধন মুখোপাধ্যায় নামে ভক্ত বলেন, “প্রতি বছরই আমরা মহালয়ার দিনে এখানে তর্পণ করি। এটা শুধু ধর্মীয় রীতি নয়, আমাদের পরিবারের বহু বছরের ঐতিহ্য।”
Post Comment