insta logo
Loading ...
×

“আইন হাতে তুলবেন না”, কুড়মি আন্দোলনে কড়া বার্তা রাজ্য পুলিশ সহ রেলের

“আইন হাতে তুলবেন না”, কুড়মি আন্দোলনে কড়া বার্তা রাজ্য পুলিশ সহ রেলের

সুইটি চন্দ্র , পুরুলিয়া :

পুজোর মুখে ফের উত্তপ্ত আদিবাসী কুড়মি সমাজের রেল-সড়ক অবরোধ ইস্যু। কলকাতা হাইকোর্ট ২০২৩ এর মতই আবার জানিয়ে দিল, আদিবাসী কুড়মি সমাজের রেল ও সড়ক অবরোধ অসাংবিধানিক এবং বেআইনি। বৃহস্পতিবার বিচারপতি সুজয় পাল ও স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের রায় বহাল রেখে স্পষ্ট জানিয়ে দিল, এই ধরনের অবরোধে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়, রেলের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই রেল ও রাজ্য পুলিশকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনীরও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। তবে আদালত এটাও বলেছে, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকার কারও কেড়ে নেওয়া যাবে না।

এই রায়ের পরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার বেলগুমা পুলিশ লাইনে সাংবাদিক সম্মেলন করে জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশ আমাদের কাছে চূড়ান্ত। অবরোধ বন্ধ করতে যা পদক্ষেপ নেওয়ার, তাই হবে। আমাদের আবেদন—কেউ কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না, অবরোধে সাহায্য করবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। নির্দেশ না মানলে আইনের পথেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অন্যদিকে সাংবাদিক সম্মেলন করে রেলের খড়গপুর ডিভিশনের আরপিএফও। আরপিএফ সিনিয়র সিকিউরিটি কমিশনার প্রকাশকুমার পান্ডা বলেন, ‘‘কোনওভাবেই রেললাইনে বসতে দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যেই খড়গপুর ডিভিশনের খেমাশুলি, সরডিহা, কলইকুন্ডা, মেদিনীপুর, গালুডি ও ভঞ্জপুর স্টেশনে নজরদারি শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত আরপিএফ মোতায়েন থাকবে।’’ এডিআরএম (অপারেশন) মণীষা গোয়েল যোগ করেন, ‘‘ উৎসবের মুখে ট্রেনযাত্রীদের হয়রান হতে দেওয়া হবে না।’’

কুড়মি সমাজ অবশ্য দাবি তুলেছে, মৌলিক অধিকারের জন্য তাদের লড়াই। তাই প্রয়োজনে জীবন দিতেও তারা প্রস্তুত। তারা আগেই জানিয়েছিল, বাংলা, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা মিলিয়ে প্রায় ১০০ জায়গায় রেল ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচি নেওয়া হবে। তার মধ্যে পুরুলিয়ায় ২৯, ঝাড়গ্রামে ৩, মেদিনীপুরে ৭, ঝাড়খণ্ডে ১৪ এবং ওড়িশায় একাধিক স্টেশন রয়েছে।

এই আবহেই অবরোধের বিরুদ্ধে পথে নেমে প্রতিবাদ শুরু করেছে পুরুলিয়ার নাগরিক সমাজ। শহর থেকে রঘুনাথপুর, জয়পুর পর্যন্ত মিছিল ও বিক্ষোভ। জেলার বিভিন্ন দুর্গাপূজা কমিটিও রাস্তায় নেমে জানিয়েছে ক্ষোভ। নাগরিক মঞ্চের পক্ষে দেবরাজ মাহাতো বলেন, ‘‘সামনে দুর্গাপূজা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ এই উৎসবে শামিল হন। এসময় রেল টেকা বা ডহর ছেঁকা জেলাবাসীকে ভয়াবহ বিপদে ফেলতে পারে। তাই প্রশাসনের কাছে আবেদন—এই কর্মসূচি আটকান।’’

জয়পুর আটাকল চকের সভায় সমাজসেবী দিব্যজ্যোতি সিং দেও বলেন, ‘‘এই আন্দোলনে গরিব মানুষের পেটে লাথি পড়বে। আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল খুঁটি মূল মানতা অজিত প্রসাদ মাহাতোকে ‘কাকা’ সম্বোধন করে তিনি বলেন , “এবার সাধারণ মানুষ যদি আপনাদের ঘেরাও করে, মান-সম্মান থাকবে না। প্রশাসনও নেবে কড়া ব্যবস্থা। ’’

প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, আইন ভাঙলে ব্যবস্থা অনিবার্য। ইতিমধ্যেই থানায় থানায় মাইকিং করে ঘোষণা চলছে—হাইকোর্ট রেল ও সড়ক অবরোধকে অসাংবিধানিক বলেছে।

এখন দেখার, আদালতের রায় ও প্রশাসনের আগ্রাসী অবস্থানের মুখে কুড়মি সমাজ তাদের কর্মসূচিতে অটল থাকে কি না। দুর্গোৎসবের আগে এই টানাপড়েনেই নজর এখন গোটা জেলার।

Post Comment