দেবীলাল মাহাত, আড়শা:
ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক সভ্যতার দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে কাগজের ঘুরনি ফুল,কাগজের ঘুড়ি, বাদ্যযন্ত্র, কাগজের ফুল। এর ফলে বিপন্ন হয়ে পড়েছে কাগজ শিল্পের সাথে যুক্ত কারিগরেরা। তাই বাঙালির শ্রেষ্ঠ দুর্গাপুজো এলেও দেখা মিলছে না তাদের। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে শুনতে পাওয়া যায় না আর তাদের গলার ডাক, ফেটফেটি বাদ্যযন্ত্রর আওয়াজ। প্লাষ্টিকের চাপে পেছনের সারিতে তারা। অনেক কারিগর বদলে ফেলেছেন পেশা ।
পুজো মানেই ছোট বাচ্চাদের কাছে নতুন জামা প্যান্ট, ঠাকুর দর্শন আর কাগজের রকমারি খেলনা। সেই সব খেলনা ছিল পরিবেশ বান্ধব। কিন্তু সময়ের সঙ্গে জামা প্যান্ট, ঠাকুর দর্শন একই রয়ে গেলেও বদলে গিয়েছে খেলনার উপকরণ। দোকান সহ বাজারে ছেয়ে গেছে সারি সারি প্লাস্টিকের খেলনাতে। আর তাতেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে কাগজ শিল্পের সাথে যুক্ত কারিগরেরা। আড়শার বামুনডিহা গ্রামের কাগজ শিল্পী বসু যোগী ,জুরাডি গ্রামের শংকর যোগী বলেন, “কয়েক বছর আগেও পুজোর আগে কাগজ, বাঁশ দিয়ে কত খেলনা তৈরি করতাম। কেনা বেচা হতো। বাড়ির সকলেই খেলনা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। প্লাস্টিকের খেলনা বাজারে চলে আসায়,আর কাগজের তৈরি খেলনা কেউ নিতে চান না। ফলে আমাদের পেশা বদলাতে হয়েছে।”
আর এক কাগজ কারিগর ছুটু যোগী বলেন, “কাগজের দাম বেড়ে গিয়েছে তিনগুণ। বাঁশ কাগজের দাম বাড়লেও , খেলনার দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ ওই দামের মধ্যে রংবেরঙের প্লাস্টিকের খেলনা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কাগজের খেলনার চাহিদা কমে গেছে। আমাদের আয়ও কমে গেছে।”
তুম্বাঝালদা গ্রামের চিত্রশিল্পী চিত্তরঞ্জন মাহাত বলেন, “পুজোয় বিভিন্ন ধরনের খেলনা কেনা ছোটছোট ছেলে মেয়েদের শখের একটা অঙ্গ। বাজারে প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের খেলনা চলে আসায়,পরিবেশ বান্ধব হলেও কাগজের খেলনা বাচ্চারা কেউ নিতে চাইছে না। “
তবে দূষণ ঠেকাতে প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্য বাজারে বিক্রি করার উপর কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আবার আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন কাগজ শিল্পের কারিগরেরা। পরিবেশ বান্ধব খেলনাগুলো আবার ছোট ছোট বাচ্চাদের হাতে ফিরে আসবে বলে তাদের আশা।
Post Comment